ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খালেদা নির্বাচন করতে পারবেন কিনা, যা বললেন আইনমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮
খালেদা নির্বাচন করতে পারবেন কিনা, যা বললেন আইনমন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: এতিমদের টাকা আত্মসাতের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেবেন কিনা- সে বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল ও নির্বাচন কমিশনেই নির্ধারণ হবে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে যে নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক যদি কারো সাজা হয় তাহলে তিনি পার্লামেন্টের নির্বাচন করতে পারবেন না।  
 
‘হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে দু’টি রায় আছে, যেখানে এই ব্যাপারে সুনিশ্চিত বলা আছে যে, আপিল যতক্ষণ শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামালাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায় নাই, সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও তিনি ইলেকশন করতে পারবেন।

আবার আরেকটা রায় আছে, পারবেন না। ’
 
‘এখন উনার ব্যাপারে আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা…। এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার। ’
 
সাজার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা আছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সেটা এবারও প্রমাণ হলো। এ অভিযোগ তার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এজাহার দাখিল করে। সেটার তদন্ত হয়, অনুসন্ধান হয়। সবই স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন করেন। তারপর দুদক এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগ গঠনের সময়ও তারা (বিএনপি) হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে যান, সববারই তারা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে পরাজিত হওয়ার পর এ মামলার বিচার কার্য শুরু হয়। বিচার শুরু হওয়ার পরে উনারা অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা দেওয়ার পরে উনাদের পছন্দ মতো একজন বিচারক পাওয়ার পরে বিচার সম্পন্ন করতে দেন। আজকে তিনি দোষী প্রমাণিত হয়ে বিচারক পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।  
 
আইনমন্ত্রী বলেন, বলতে পারি এই রায়ে প্রমাণ হলো যে বাংলাদেশে বিএনপি আমলে অপরাধীদের যে স্বর্গ ছিল, তার অবসান হয়েছে। এখন এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে অপরাধ করলে তার বিচার হয় এবং সুষ্ঠু বিচার হওয়ার পরে তার শাস্তি হয়। এই মামলা দুদক কাগজপত্রে প্রমাণ করেছে এবং সেজন্যই আজকের সাজা।  
 
‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে যে দুর্নীতির আঁখড়া ছিল, সেইখান থেকে আমরা পরিত্রাণ পাওয়ার প্রচেষ্টায় ছিলাম তার একটা সাফল্য এটা। আমি নিশ্চয় বলতে পারি একজন রাজনীতিবিদ দুর্নীতি করে, একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি করার পর সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, এটা আমাদের ভামূর্তি খুব একটা উজ্জ্বল করে না। তবুও আমরা অন্ততপক্ষে পৃথিবীর কাছে বলতে পারবো যে, যারা দুর্নীতি করেন তাদের এই দেশে বিচার হয়। যেমন, যারা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন, তাদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে সপরিপবারে খুন করেছিলেন তাদেরও বিচার হয়েছে। এ বিচার প্রক্রিয়াটাই আমাদের সাফল্য। ’
 
রাজনৈতিক উদ্দেশে এই মামলা সামনে নিয়ে আসা হয়েছে বলে যে অভিযোগ, সে প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে এ মামলা রুজু করার পরে সাড়ে নয় বছর মামলা চলেছে। সেটা যদি খুব অল্প সময় হয়ে থাকে তাহলে আমার কিছু বলার নাই! সাড়ে নয় বছর পরে এবং আইনে উনি যা যা বেনিফিট পাওয়ার কথা সেগুলো তাকে দেওয়ার পর আজকে এ মামলা শেষ হয়েছে, সেটা আমার মনে হয় না যে খুব তাড়াতাড়ি করা হয়েছে।  
 
পরবর্তী প্রক্রিয়া
পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনে পরের প্রক্রিয়া কী সেটা আমি বলতে পারি। কিন্তু কথা হচ্ছে উনারা কী করবেন, সেটা তো আমি বলতে পারবো না।
 
‘আইনে পরের প্রক্রিয়া হচ্ছে যে, তারা নিশ্চয়ই এই মামলার আপিল করার সুযোগ পাবেন। তারা যদি আপিল করেন, তাহলে হাইকোর্টে তারা আপিল করবেন। এটাই হচ্ছে এ মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ’।
 
তিনি বলেন, মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পরে তারা আপিল করতে পারে। সেখানে আপিল করার করার সঙ্গে সঙ্গে তারা বেইল (জামিন) পিটিশনও দিতে পারেন।
 
কতদিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন- প্রশ্নে বলেন, রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পরে লিমিটেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিস্কার বলা আছে কতদিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন। তবে সেটা যতটুকু জানি ৬০ দিন।  
 
‘যেই মুহূর্তে রায় দেওয়া হয়, সেই মুহূর্তে কিন্তু সময় গণনা। এই যে ৬০ দিনের কথা বললাম, সময় গণণা শুরু হয়। কিন্তু যেই মুহূর্তে সার্টিফাইড কপির জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দরখাস্ত করে, সেই মুহূর্তে কিন্তু সময় গণণা বন্ধ হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সার্টিফাইড কপি প্রস্ততি হয়। যে মুহূর্তে সার্টিফাইড কপি প্রস্তুত হবে সেই মুহূর্তে আবার সময় গণণা শুরু হবে। তার মনে হচ্ছে, সার্টিফাইড কপি তিনি যতদিন না পাবেন, ততদিন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে এই ৬০ দিন গণনা করা হবে না। ’
 
আজকে সার্টিফাাইড কপি পাওয়া যাবে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ৬৩২ পাতার রায়, আমি টেলিভিশনে দেখেছি, এটা আজকে পাবেন কী করে- এটা সম্ভব নয়।
 
জানমালের হেফাজতের পদক্ষেপ নেবে সরকার
এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারকে জনগণ তাদের জানমালের হেফাজতের দায়িত্ব দিয়েছে। সেই জানমালের হেফাজতের জন্য আমাদের যদি কোনো পদক্ষেপ নিতে হয়, সেটা আমরা সব সময় নেব।
 
লন্ডনে হামলার বিষয়টি তুলে মন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী লন্ডনে পাহারা দিচ্ছিলো না, বাংলাদেশের জনগণের সম্পত্তি হাইকমিশনে অতর্কিত হামলা করে কিছু ছবি ভাঙচুর করে এবং সরকারি কর্মকর্তাকে তারা মারধর করে। লন্ডনে তো এটার প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা না। অতীতেও দেখা গেছে বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি হামলায় ওস্তাদ। সে কারণে জানমালের যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে। কারণ, তাদের কর্মকাণ্ডে আমরা এটুকু টের পেয়েছি যে তারা এ টুকু করতে পারে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৮
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।