বাড়ছে উবার, স্যাম, পাঠাওয়ের অধীনে মোটরসাইকেল রাইডের মতো ছোট যানবাহনের কদর। তবে কিছুতে মিলছে না স্বস্তি।
বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এসব ছোট যানবাহন বাড়ায় প্রধান সড়কের ভয়াবহ যানজট মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে অলিগলিতেও। সব মিলিয়ে ট্রাফিক পুলিশ, নগর কর্তৃপক্ষ সবাই যেন দিশেহারা।
এদিকে গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার যানজটের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যানজটের পেছনে পথচারী এবং পরিবহন শ্রমিকরদের দায়ও কম নয়।
রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট, বনানী, কুড়িল বিশ্বরোড, এয়ারপোর্ট এলাকাসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও মানুষ তা ব্যবহার করছেন না। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ায় বহু দুর্ঘটনার নজিরও ঢাকা শহরে আছে। প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। তবুও নেই সতর্কতা।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যকে লাঠি নিয়ে পথচারীদের পিছনে ছুটতে দেখা গেছে। মহাসড়কের মাঝে বাঁশ দিয়ে ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে পারাপার ঠেকাতে। বাঁশের বেড়া ভেঙে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। কিন্তু পাশেই রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে এক পথচারীকে প্রশ্ন করতেই তিনি রেগে গিয়ে প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনি এ প্রশ্ন করার কে? পরে ভিডিও ফুটেজে নিজের ছবি দেখে সরকারি চাকরিজীবী পরিচয় দিয়ে হাস্যকর ভঙ্গিতে উত্তর দেন, আসলে ফুটওভার ব্রিজটা একটু দূরে। কেউ কষ্ট করে তা ব্যবহার করে না। এখান থেকে একটু ঝুঁকি হলেও সময় এবং কষ্ট দুটোই কম লাগে। তবে সবার ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা উচিত বলেও স্বীকার করেন তিনি।
এসব পথচারী মনে করেন, ১০ সেকেন্ডে রাস্তা পার হয়ে যাবো, এতে আর কী ক্ষতি হবে! কিন্তু দিন শেষে এমন কত ১০ সেকেন্ড পার হয় তার খবর কেউই রাখেন না।
ট্রাফিক পুলিশ বলছে, গাড়ির গতি স্বাভাবিক থাকলে প্রতি ৫ সেকেন্ডে একটা করে গাড়ি সিগন্যাল পার করা সম্ভব। কিন্তু একজন পথচারী যদি রাস্তা পার হয় তার ২০ ফুট রাস্তা পার হতে কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড সময় লাগে। একটা পয়েন্ট থেকে যদি দিনে ৫শ’ মানুষ এভাবে রাস্তা পার হয়, তাহলে তাদের কারণে এক হাজার গাড়ির চলার গতি রোধ হয়। এভাবে এক পয়েন্টেই দিনে দেড় ঘণ্টার বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে রামপুরা, কারওয়ান বাজার, গুলিস্তান এলাকাগুলো অত্যন্ত ব্যস্ত হলেও সেখানে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। ফলে সেখানেও রাস্তায় গাড়ি থামিয়েই পার হচ্ছেন পথচারীরা। এতে একদিকে যেমন গাড়ির গতি কমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
একইসাথে পরিবহন শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব এবং প্রতিযোগিতার প্রবণতা যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন অনেকেই। সড়কে এসব পরিবহন শ্রমিকরা যত্রতত্র গাড়ি রেখে যাত্রী ওঠানামা করান। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় রাস্তায় আড়াআড়ি গাড়ি পার্কিং করে পেছনের গাড়ি আটকে রাখেন। এতে করে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানযটের।
ট্রাফিক পুলিশের দাবি ঢাকা শহরের পথচারী এবং পরিবহন শ্রমিকরা নিয়ম মেনে চলাফেরা করলে ৪০ শতাংশ যানজট কমে যাবে।
ঢাকা মেট্রপলিটন ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ এস এম মুক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের শহরে কেউই ট্রাফিক আইন মানতে চায় না। জরিমানা করে মামলা দিয়ে মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করা গেলেও তা বেশি দিন টেকে না। এজন্য দরকার সবার সচেতনতা। আমি রাস্তায় ছিলাম ১৩ মাস, এসি থেকে এডিসি হয়েছি। আমার অভিজ্ঞতায় বলছি, মানুষ ট্রাফিক আইন মেনে চললে ঢাকা শহরের ৪০ শতাংশ যানজট থাকবে না।
মুক্তারুজ্জামান আরো বলেন, বিশেষ করে যখন স্কুল কলেজ, গার্মেন্ট ছুটি হয় তখন তো রাস্তা বন্ধই হয়ে যায়। মানুষ গাড়ি বন্ধ করে আড়াআড়ি রাস্তা পার হন। গাড়ি না থামালে গার্মেন্টকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে যান।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৮
এসআইজে/এমজেএফ