এই চিন্তা মাথায় নিয়ে ২০১০ সালে মাকে নিয়ে হজে যান। সেখানে একটি মসজিদের ইফতারের আইটেমগুলোর মধ্যে ছিল বড় এক কাপ খেজুর।
এগিয়ে যাওয়ার এই গল্পটা কাজী সাজিদুর রহমানের। শ্রম, একাগ্রতা আর একনিষ্ঠতার জোরে যিনি বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তুলেছেন কাগজের পণ্যকে, বিশেষ করে কাপকে। এই ব্যবসা বৃহৎ পরিচয় দিতে চালু করেছেন কেপিসি (পেপার কাপ) ইন্ডাস্ট্রিজ। তার এই ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে উৎপাদন হচ্ছে শতভাগ পরিবেশবান্ধব কাপ, প্লেট, মগসহ বিভিন্ন পণ্য।
কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদিত কাপ, মগ, বাটি, প্লেট ইত্যাদি পণ্য এখন ব্রিটিশ কাউন্সিল, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, নেসলে, ওয়েস্টিন, সোনারগাঁও হোটেল, বসুন্ধরা গ্রুপ, অ্যাপোলো হসপিটাল, ইউনাইটেড হসপিটাল, ইস্পাহানি মির্জাপুর চা, ডানো, প্রাণ, আকিজ গ্রুপ, বুমারস ক্যাফে, বাংলা কফি, বিএফসির মতো ২৮০ প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রোলিয়া ও নেদারল্যান্ডেও কেপিসির পণ্য রপ্তানির আলোচনা চলছে।
রাজধানীর তেঁজগাও শিল্প এলাকায় গলির শুরুতেই ছোট্ট একটি কারখানা। কাগজের পণ্য উৎপাদন দেখতে ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিললো রঙ-বেরঙের পেপার। চলছে কর্মযজ্ঞ। দক্ষ শ্রমিক আর আধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে কাগজের কাপ। বাহারি রঙ আর নানা আকারের কাপ। আধুনিক নগরজীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এসব। কখনো সে কফির মগ, কখনো পেপসির ক্যান আবার কখনো বা পাঁচতারকা হোটেলের বিলাসী পণ্য।
এই ছোট ছোট কাপ বানানোর মাধ্যমেই সাজিদ গড়ে তুলছেন তার স্বপ্নের আকাশ ছোঁয়ার সিঁড়ি। তরুণ এই উদ্যোক্তা শুধু নিজের স্বপ্নপূরণ নয়, কর্মসংস্থান করেছেন অনেক বেকারের; নিজের স্বপ্নের চূড়ান্ত বাস্তবায়নের পথে সিঁড়ি বেয়ে উঠছেন নিরন্তর। সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ সাজিদ বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কারও পেয়েছেন ২০১৬ সালে।
২০১২ সালে যাত্রা করা তার কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের শতভাগ পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে কাজ চলছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে দিনে ১৬ লাখ পেপার পণ্য উৎপাদন করা যাবে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় শত লোকের।
কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) কাজী সাজিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিকল্পনা থেকে কারখানা স্থাপন পর্যন্ত কাজ এগিয়ে নিয়েছি। প্রথমে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। কারণ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের পণ্য বাজারজাত করতে শুরু করে; কিন্তু বাজারে জায়গা করে নিতে পারেনি তারা কেউ।
আধুনিক যোগাযোগ দক্ষতায় অল্প দিনে আমাদের পণ্য জনপ্রিয় করে তুলি। কিছুদিন যেতেই ব্যাপক সাড়া পেতে থাকি। এক পর্যায়ে অবস্থা এমন দাঁড়ালো, অর্ডার যতো আসছে, সেসব সঠিক সময়ে শেষ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, শুরুতে ১০ লাখ টাকা নিজস্ব পুঁজির সঙ্গে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করি। তখন মাত্র একটি রুমের মধ্যে কাজ হতো। আর আমিসহ মোট লোকবল ছিলাম মাত্র চারজন। প্রথম দিন ২০ হাজার পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে কাজ শুরু করলেও এখন প্রতিদিন প্রায় চার লাখ পেপারের গ্লাস উৎপাদন হচ্ছে তেজগাঁওয়ের কারখানায়।
নিজের স্বপ্ন নিয়ে তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, শৈশব থেকেই নিজের একটি পরিচয় প্রতিষ্ঠার তাগিদ ছিল। তাই ফুটবলের মাঠে স্ট্রাইকার, ক্রিকেটে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হয়ে খেলেছি খুলনায়। একসময় মনে হলো আমাকে অন্য কিছু করতে হবে। তারপর অনেক ধরনের ব্যবসা-পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করি।
কখনো শেয়ারবাজারে, আবার কখনো ইলেকট্রিক সরঞ্জাম সরবরাহে। এতো কিছুর পরও নিজের স্বপ্ন যেন পূরণ হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমি খুঁজে পেয়েছি আমার স্বপ্নপূরণের পথ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
এসই/এইচএ/