রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি।
খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়ার বিষয় নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বলে জানান পরিষদের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, আবদুল মতিন খসরু, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবুদল বাসেত মজুমদার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি মো. অজি উল্লাহ প্রমুখ।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। যে জাতি যত বেশি আইনের শাসন ভোগ করেছে সেই জাতিকেই তত বেশী সভ্য মনে করা হয়’।
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘ধনি-গরিব, সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব কারো সঙ্গে কোনো ভেদাভেদ করা যাবে না, সবাই সমান’।
খালেদা জিয়ার রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছে। দেশে যে অপসংস্কৃতি ছিলো, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর অপসংস্কৃতির অবসান হয়েছে। আমরা মনে করি এবং যতটুকু আমরা এজাহার এবং চার্জশিট থেকে দেখেছি এ মামলাটি অত্যন্ত পরিষ্কার। তারপরও দীর্ঘসময় কালক্ষেপণ করা হয়েছে, এ মামলা নিষ্পত্তিতে’।
‘যদিও এ মামলার উৎপত্তি শুরু সেই ১৯৯১ সালে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে যে টাকা আনা হয়েছে সেটাকে প্রধানমন্ত্রী এতিম তহবিল হিসেবে সেই ফান্ড গঠন করে সেখানে প্রথমে ওই টাকা রাখা হয়। পরবর্তীতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সৃষ্টি করে সেই টাকা সেখানে স্থানান্তর করা হয়। সেই ট্রাস্ট থেকে ২০০৭ সাল থেকে কাজী সলিমুল হক, তারেক রহমান, মুমিনুর রহমান এবং শরফুদ্দীন নামের ব্যক্তিদের নামে টাকা ট্রান্সফার করা হয়। ২ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করা হয়। আমরা জানি একটি ট্রাস্ট করতে হলে ট্রাস্টি বোর্ড থাকে এবং বেনিফিশিয়ারির জন্য সেই টাকা ব্যয় করা হয়ে থাকে’।
এতিম তো দূরে থাক কোনো গরিব ব্যক্তির জন্য সেই ট্রাস্টের টাকা ব্যবহার করা হয়নি উল্লেখ করে ফজলে নূর তাপস বলেন, শরফুদ্দীন, তারেক রহমানসহ অন্যরা এ টাকা নিজেদের নামে আত্নসাৎ করেছেন।
খালেদা জিয়াসহ যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন, এটা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে মন্তব্য করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, এখন আইনের প্রক্রিয়ায় তিনি আপিল করবেন। আদালত বিবেচনা করবেন যে, তাকে জামিন দেওয়া যায় কিনা। এবং তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামিন পেতে পারেন। ’
ব্যারিস্টার তাপস আরও বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কিন্ত আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, এ রায়কে সেই মহল একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা তাদের চলমান। তারা ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে দেশকে যে বিশৃংখলার মধ্যে নিয়ে গিয়েছিলো সেই রকম একটি ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত হয়েছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। ডিভিশন দেওয়াকে নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডিভিশন তিনি প্রাপ্য। সে প্রাপ্য পরিপূর্ণভাবে তাকে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং নতুন করে ধুম্রজাল ষড়যন্ত্র সৃষ্টির অবকাশ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের বেশি সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এখন হাইকোর্টে আপিল হবে। তিনি জামিন আবেদন করতে পারবেন। জামিনও পেয়ে যাবেন …..। তিনি মামলা স্থগিতও চাইতে পারেন। এ অবস্থায় কেউ যদি আপিল করে আপিল চলা অবস্থায় একেবারে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কাজেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো রকমের বিতর্ক সৃষ্টি করা ঠিক না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১,২০১৮
ইএস/জেডএস