রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এ কে এম নাছিমুল আক্তার।
তিনি জানান, গত সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আইনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া এ রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। আশা করছি এ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেবেন বিজ্ঞ বিচারক।
এদিকে গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব আসামিদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন রূপার মা ও ভাইসহ সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের আসানবাড়ি গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।
নিহত রূপার মা মোছা. হাসনা হেনা ও বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, এ সব নরপিশাচদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি কামনা করছি আমরা। যাতে করে আমার বোনের মত আর কাউকে এমন নির্মম পৈশাচিকতার শিকার হতে না হয়।
তাড়াশ ইসলামিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান, আসান বাড়ি গ্রামের মাতব্বর কামরুল ইসলাম, সমাজসেবক শরিফুল ইসলাম ও তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। বিশেষ করে আলোচিত এ মামলার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হওয়ায় আমরা এলাকাবাসী সন্তুষ্ট। আশা করছি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার মধ্য দিয়ে কলেজছাত্রী রূপা হত্যার বিচার পাবো। আর রূপার আত্মাও শান্তি পাবে।
এই ঘৃণ্য অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন বলেন, গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে কলেজছাত্রী রূপাকে গণধর্ষণ করে ওই বাসেরই শ্রমিকরা। ধর্ষণের পর বাসের মধ্যেই তাকে হত্যার পর টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। রাতেই পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
এদিকে পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে তার ভাই হাফিজুর রহমান রূপাকে শনাক্ত করেন। ২৮ আগস্ট ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫), হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি মামলার বাদী মধুপুরের অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় চাঞ্চল্যকর এ মামলার কার্যক্রম। ২৩ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক কাইয়ুম খান সিদ্দিকীর সাক্ষী ও জেরার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়। এ মামলায় চিকিৎসক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ২৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত।
৫ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেন বিচারক টাঙ্গাইল জেলা ও দায়রা প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া। এর মধ্য দিয়েই ঘটনার ১৭৩ দিন আর মামলার ১৭১ দিনের মাথায় আলোচিত এ মামলার রায় হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ