রাজধানীজুড়ে ব্যস্ততম সড়ক, মোড়ে এমন ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের যুগে মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারী যেমন বেড়েছে, বেড়েছে অসর্তক ব্যবহারও।
বেপরোয়া গাড়ি চালানো, নিয়ন্ত্রণহীন গতি, অদক্ষ গাড়িচালক, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনায় বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। তেমনি রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় কানে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ফেসবুকিং বা মেসেজ আদান-প্রদান, হেডফোন কানে নিয়ে গান শুনতে শুনতে রাস্তা পার হচ্ছেন অসংখ্য পথচারী। এসব পথচারী একবারও ভাবছে না তার এই অসর্তকতা ‘আত্মহত্যারই শামিল’।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ব্যস্ততম অনেক এলাকায় ফোন কানে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল চালানোসহ ফোনের বিপদজ্জনক ব্যবহারের মধ্যমে–এমন ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপারের অসংখ্য চিত্র দেখা যায়।
বাংলামোটর মোড়ে ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। একপর্যায়ে দ্রুতগতির একটি প্রাইভেটকারের সামনে পড়েন। চালক কোনোরকমে ব্রেক চেপে গাড়িটি থামান। দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যান বৃদ্ধ।
ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই বৃদ্ধ বলেন, রাস্তাটা ফাঁকা ছিলো, এজন্য পার হচ্ছিলাম। গাড়ি এসে পড়বে বুঝতে পারিনি। বয়স হয়েছে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হতে পারি না, কষ্ট হয়।
কারওয়ান বাজার মোড়ে একমনে ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক তরুণ। একপর্যায়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেন।
ঝুঁকি নিয়ে পারাপারের কারণ জানতে চাইলে প্রথমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান সায়েম নামের ওই তরুণ। পরে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এভাবে রাস্তা পার হওয়ায় ঝুঁকি ছিলো, কিন্তু অনেক সময় হয়ে যায়। এমনটা করা উচিত হয়নি। আশা করি ভবিষ্যতে আর এভাবে পার হবো না’।
কানে মোবাইল ফোন বা হেডফোন লাগিয়ে নিয়মিত রাস্তা পার হচ্ছেন বহু মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে চালকের সাবধানতায় সম্মুখ বিপদ থেকে রক্ষা পেলেও সবসময় তা হবে না। কারণ ফাঁকা সড়কে চালকের বেপরোয়া গতি প্রাণহানির অনেক নজির রয়েছে। এজন্য সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক নিয়ম মানা ও সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে বা বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়ার ঘটনা দেশে অনেক রয়েছে। এগুলো অসচেতন মানুষের কাজ। এটা এক ধরনের আত্মহত্যার চেষ্টার শামিল। সম্প্রতি এমন ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য বেড়েই চলছে। সচেতন না হলে দুর্ঘটনা বেড়ে যাবে। আমাদের সংগঠন জনগণের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনারোধে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট অভিযানে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করায় পথচারীদের সামান্য আর্থিক জরিমানা করা হয়। তবে এ কার্যক্রম অব্যাহত না থাকায় এ ধরনের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, আইনে নির্দিষ্ট সাজা না থাকায় এমন পথচারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে না। ফলে পুলিশের চোখের সামনেই অহরহ ঘটছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা।
ডিএমপি ট্রাফিক (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মফিজউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোবাইল ফোন বা হেডফোন কানে দিয়ে রাস্তা পারাপারের বিরুদ্ধে কোনো আইন না থাকায়, তাদের সুনির্দিষ্ট শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয় না।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জেব্রা ক্রসিং, গাড়ির জন্য সুনির্দিষ্ট লেন থাকাটা জরুরি। আমাদের এসবে ঘাটতি রয়েছে। সড়কে জেব্রা ক্রসিং উঠে গেছে, গাড়ি লেন, পর্যাপ্ত ফুটওভার নেই-এসব কারণে মানুষের আইন না মানার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সড়কে ট্রাফিক সুশৃঙ্খলা ফেরাতে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। আশা করি দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।
এছাড়া মানুষকে তার জীবনের মূল্য বুঝতে হবে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। এজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮
এমসি/জেডএস