এর ফলে আগের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে দেশীয় অর্থায়নে ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চার লেন নির্মাণে সরকারি তহবিল থেকে ১১ হাজার ৪১২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম শাহিদা খানম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা-সিলেট চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প থেকে চীনের অর্থায়ন বাদ গেছে। আমরা দেশীয় অর্থায়নেই এটা বাস্তবায়ন করব। সেই অনুযায়ী ডিপিপি প্রস্তুত করেছি।
সচিবকে ঘুষ সাধায় চীনের অর্থায়ন বাদ দেওয়া হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে বিষয়টি অনেকটা এমনই। এ বিষয়ে বলা যাবে না। কারণ, চীনের অর্থায়নে আরও প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
চীনের অর্থায়নে ২২৬ কিলোমিটার সড়কের কথা উল্লেখ থাকলেও নতুন করে কমে ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করবে সরকার। দেশীয় অর্থায়নের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ডিপিপি’তে। চীনের অর্থায়নের সব কিছুই ডিপিপি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন ডিপিপি সওজ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ০১ ফেব্রুয়ারি। নতুন করে প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে ‘ঢাকা (কাঁচপুর)–সিলেট মহাসড়ক উভয় পার্শ্বে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ’। এপ্রিল ২০১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ মেয়াদে প্রকল্প সম্পন্ন করতে চায় সরকার।
মূল সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মিত হবে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাঁক সরলিকরণসহ অধিকমাত্রার ট্রাফিক বিবেচনায় এনে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগ নিশ্চিতকরণ করা হবে। শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে এশিয়া হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) করিডোর, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চার লেনটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
প্রকল্পের আওতায় পৃথক সার্ভিস লেনসহ সড়ক নির্মাণে অতিরিক্ত ৯৮৬ দশমিক ৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর জন্য মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ইউটিলিটি স্থানান্তর করা হবে প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পের আওতায় ৩২১টি আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। কালভার্টগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১ হাজার ৩৮১ মিটার। ছোট-বড় ৭০টি ব্রিজসহ থাকবে পাঁচটি রেলওয়ে ওভারপাস।
নতুন পরিকল্পনায় চারটি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস, ৪২টি ফুটওভার ব্রিজ, তিনটি ট্রাক স্ট্যান্ড এবং দু’টি রেস্ট হাউজ থাকবে সড়টিতে। নানা কারণে সরকারি অর্থায়নে চার লেন নির্মাণ করবে সরকার। সিলেট চা উৎপাদনে ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। বর্তমানে এখানে বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। সিলেটে রয়েছে বেশ কয়েকটি সিমেন্ট ও সার কারখানা। সিলেটের পাথর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। সিলেটে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ প্রচুর তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে। এসব কারণে দেশীয় অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে চার লেন।
চায়ের প্যাকেটের মধ্যে বিদেশি মুদ্রায় ঘুষ সাধে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং। পরে সেই অর্থ ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে চায়নার সব ধরনের সম্পৃক্ততা প্রকল্প থেকে তুলে নেওয়া হয়।
এ প্রকল্পে ঋণের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া উইং) জাহিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা-সিলেট ফোর লেনে ঋণের বিষয়ে চায়নার সঙ্গে ফরমাল চ্যানেলে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে প্রকল্পের কাজ পেতে চীনা কোম্পানি ঘুষ দিতে গিয়েছিলো। এজন্য ঢাকা-সিলেট ফোরলেন নির্মাণে চীনের অর্থায়ন নেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮
এমআইএস/এমজেএফ