এই তিন জনের নাম মনির, শামীম ও বরকত। তিনজনই রামপুরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন বনশ্রীর অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ডটি ঘুরে এবং স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই স্ট্যান্ডে প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গাড়ি দাঁড়ানো থাকে। স্ট্যান্ডে আসা প্রতিটি লেগুনার চালককে প্রতিদিন ‘প্রোটেকশন মানি’ হিসেবে ৪৫০ টাকা দিতে হয়। এই অর্থ সরাসরি যায় মনির, শামীম, বরকত গ্যাংয়ের পকেটে। শুধু লেগুনাই নয়, ‘টাকা ছাড়লে’ এই স্ট্যান্ডে স্থান হয় সিএনজি ও বাসেরও। প্রতিদিন শত শত গাড়ি থেকে এভাবে টাকা তুলে ওই তিন জন ‘প্রভাবের ছড়ি’ ঘোরাচ্ছেন আরও জোরেশোরে।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন আশপাশের প্রায় সবগুলো এলাকায় যানজট সবসময়ই লেগে থাকে। এই যানজট থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে রামপুরার বাংলাদেশ টেলিভিশন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ইউলুপ। তাছাড়া রাস্তা সংস্কারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এই সমস্যা নিরসনের জন্য। কিন্তু বনশ্রী-রামপুরায় এমন বেশ কয়েকটি অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ডের কারণে এসব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি।
এলাকাটি ঘুরে দেখা যায়, অবৈধ এই লেগুনা স্ট্যান্ডের কারণে বনশ্রী থেকে মাদারটেক, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার ও সাইনবোর্ডগামী রোডে যেমন সৃষ্টি হয় যানজট, তেমনি বিপরীত দিকে এই যানজটের প্রভাব বনশ্রী আবাসিক এলাকায়ও দেখা যায়। এছাড়া স্ট্যান্ডের কারণে রামপুরা ব্রিজ এলাকায়ও সৃষ্টি হয় বড় ধরনের জটলা।
এই অবৈধ স্ট্যান্ড সম্পর্কে লেগুনা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন ‘প্রভাবশালী’র মধ্যে মনির ও শামীম স্ট্যান্ডে আসেন না। এখান থেকে টাকা তোলার দায়িত্ব বরকতের, তিনি প্রতিদিন এসে টাকা তোলেন এবং স্ট্যান্ডের দেখাশোনা করেন। আর দূর থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন মনির এবং শামীম।
ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ এই স্ট্যান্ডের বিষয়ে অ্যাকশন নিয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে চালকরা বলেন, এসব ঝামেলা ওই তিনজন ‘সামলে নেন’।
মিজান নামে এক লেগুনা চালক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা টাকা দিয়ে স্ট্যান্ডে গাড়ি নিয়ে আসি। আর কোনো সমস্যা হলে মনির ভাইরা তো আছেনই। ’
এ বিষয়ে মনির, শামীম ও বরকতের সঙ্গে কথা বলার জন্য চালকদের কাছে তাদের ফোন নাম্বার চাওয়া হলে কেউ দিতে রাজি হননি। আর স্ট্যান্ডে সাংবাদিক আসার খবর শুনে সোমবার টাকাও তুলতে আসেননি বরকত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও এ রুটে যাতায়াতকারী যানবাহনের যাত্রীরা অভিযোগ করেন, অবৈধ স্ট্যান্ডটির কারণে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় যানজট তৈরি হয় প্রতিনিয়ত। এমনও হয়, রাস্তা দিয়ে হাঁটা পর্যন্ত যায় না।
বনশ্রী আবাসিক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এভাবে রাস্তা দখল করা অন্যায়। এমনিতেই এই শহরে চলাফেরার জন্য রাস্তা কম, তার মধ্যে যদি একের পর এক রাস্তা দখল হতে থাকে, তাহলে যানজট তো হবেই। এই স্ট্যান্ডের কারণে রামপুরা ব্রিজ ও বনশ্রী আবাসিক এলাকায় সব সময় একটা যানজটলা লেগেই থাকে।
ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে প্রতিদিন রামপুরা গিয়ে অফিস করতে লেগুনায় চড়েন মো. হাফিজ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু এখানে গাড়ির স্থায়ী কোনো স্ট্যান্ড নেই, তাই এ সমস্যা হচ্ছে। লেগুনাগুলো যদি দিন-রাত না দাঁড়িয়ে থেকে, যাত্রী ওঠা-নামা করে চলে যেতো অল্প সময়ের মধ্যে, তাহলে সমস্যা কিছুটা কম হতো। কিন্তু তারা এটা না করে স্থায়ী স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলায় এই সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ও বনশ্রীর অবৈধ স্ট্যান্ডে এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কিছু বলতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমএসি/এইচএ/