ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইজিবাইকের দখলে খাগড়াছড়ি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
ইজিবাইকের দখলে খাগড়াছড়ি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ইজিবাইকের দখলে খাগড়াছড়ি পৌর শহর। ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: একটা সময় খাগড়াছড়িতে রিকশা ছিল মূল বাহন। রাস্তাঘাট থাকতো নিরিবিলি। কিন্তু সেই চেনা দৃশ্য এখন আর নেই। কমেছে রিকশার ব্যবহার। এখন খাগড়াছড়ি যেন দখলে নিয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। অদক্ষ চালক, যেখানে-সেখানে পার্কিং, বেপরোয়া গতি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারসহ নানা কারণে ইজিবাইকে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ির মানুষ।

জেলায় ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তা পারাপারই দায় হয়ে পড়েছে শহরবাসীর। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার এই বাহনটি জেলাবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনিয়ন্ত্রিত এই বাহনটির কারণে প্রতিদিন জেলায় কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে।

ইবিজাইক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৈঠকে বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্ত হলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে শহরে কি পরিমাণ ইজিবাইক আছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই খাগড়াছড়ি পৌরসভার কাছে। তবে পৌরসভা কিছু টাকার বিনিয়মে ১ হাজার ২শ’ ইজিবাইককে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। তবে বাস্তব অর্থে এই সংখ্যা কয়েকগুণ।

ইজিবাইকের কারণে রাস্তা পারাপারে ভোগান্তি বাড়ছে।  ছবি: বাংলানিউজ
বাজার ব্যবসায়ী নজির আহম্মেদ জানান, ছোট ছেলেরা ইজিবাইক চালায়। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। পুরো শহরটা ইজিবাইকের দখলে। এমনিতে আমরা বিদ্যুতের জন্য ভোগান্তিতে আছি। তারপর ইজিবাইকের কারণে লোডশেডিং আরও বেড়েছে।  

খাগড়াছড়ি পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক উদয় জীবন চাকমা জানান, পৌরসভা থেকে ১ হাজার ২শ’ ইজিবাইককে ১ হাজার ৩শ’ ৫০টাকার বিনিময়ে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো অবৈধ। পৌর শহরের বাইরে থেকে ইজিবাইক এসে শহরে চলে বলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ইজিবাইক চালক ফারুক মিয়া জানান, ইজিবাইকের কারণে বিদ্যুতের উপর চাপ পড়ছে-একথা সত্য। কিন্তু আমরা তো বিল দিচ্ছি। ইজিবাইক চালিয়ে আমাদের সংসার চলছে। না হয় পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।  
জানা গেছে, একটি ইজিবাইকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থাকে। ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। এজন্য প্রতিদিন একটি ইজিবাইকের গড়ে ব্যাটারি চার্জের জন্য ১২ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়।
খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাহকের জন্য প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৫ থেকে ১৭ মেগাওয়াট। কিন্তু গড়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়াট। কম বিদ্যুৎ দিয়ে চাহিদা পূরণে যখন হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ, তখন সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলছে ইজিবাইক। এসব ইজিবাইক চালানোর জন্য প্রতিদিন গড়ে ব্যয় হয় প্রায় ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

ইজিবাইকের দখলে খাগড়াছড়ি পৌর শহর।  ছবি: বাংলানিউজ
খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. জাফর বলেন, কিছুদিন পরপর অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইজিবাইক জব্দ করা হচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সবাই মিলে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে কাজ করলে সুফল পাওয়া যাবে।
খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশরী মো. আবু জাফর বলেন, খাগড়াছড়িতে বিদ্যুতের সমস্যা প্রকট। চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ পাই না। তার ওপর ইজিবাইকের কারণে বিদ্যুতের সমস্যা আরও বেড়েছে। তিনি অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।