তেমনি একটি নদ তুরাগ। গাজীপুরের উপর বয়ে যাওয়া তুরাগ নদের পানি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী বিসিকসহ আশপাশের ও মৌচাক এলাকায় রয়েছে শত শত শিল্প কারখানা। ফলে এসব কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পানি কোনাবাড়ী জরুনবাইদ এলাকায় একটি খাল দিয়ে সরাসরি ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদে।
এছাড়াও জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইমাইল ব্রিজের পাশ দিয়ে এসব বিষাক্ত বর্জ্য নামছে তুরাগ নদে।
অন্যদিকে কাশিমপুর, গাজীপুর সদর উপজেলার মনিপুর, টঙ্গীর বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদে। কোনাবাড়ী বিসিক এলাকায় নাইটএ্যঙ্গেল, ভাজন এ্যাপারেল, মাশরিকি, লাইফ টেক্সটাইসহ বিভিন্ন কারখানার থেকে পাইপ দিয়ে বের হচ্ছে রঙিন পানি। গাজীপুরবাসী সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের মানুষ এক সময় পানির চাহিদা মেটাতে তুরাগ নদের উপর নির্ভরশীল ছিল। রান্নার কাজ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ কৃষি কাজে, কাপড় ধোয়া, গোসল করাসহ প্রায় সব কাজে ব্যবহার করতো তুরাগ নদের পানি। ওই সময় তুরাগ নদে ছিল স্বচ্ছ পানি ঢেউ।
এ নদে পাওয়া যেতো বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। বিচরণ করতো জলজ প্রাণী। বর্তমানে গাজীপুরে গড়ে উঠা বিভিন্ন শিল্প কারখানার দূষিত তরল বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদে।
ফলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এ নদের পানি। বর্তমানে এ নদের পানি বিষাক্ত থাকায় দেশীয় মাছসহ কোনো জলজ প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারছে না। এছাড়া দুর্গন্ধের কারণে তুরাগ নদের পাশ দিয়ে কোনো মানুষ হেঁটে ও নৌকা দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। মানুষের ব্যবহারে তুরাগ নদ এখন একেবারেই অকেজো হয়ে পড়েছে।
গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী বাংলানিউজকে জানান, তুরাগ নদের পানি ১৫-২০ বছর আগেও স্বচ্ছ ছিল। গাজীপুরের মানুষ এ নদের পানি কৃষিসহ প্রায় সব কাজে ব্যবহার করতো। এখন শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্যে তুরাগ নদের পানি ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে গেছে। তুরাগ নদের পানি রঙিন হয়ে গেছে। এ নদে এখন কোনো জলজ প্রাণী না থাকলেও এখানে বিস্তার করছে বিভিন্ন মশা।
কোনাবাড়ী বিসিক এলাকায় অবস্থিত নাইটএঙ্গেল কারখানার কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবীর জুয়েল বলেন, তাদের কারখানার ইটিপি রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা তারা তা ব্যবহার করছে। তাদের কারখানার থেকে কোনো দূষিত পানি বের হয় না বলে জানান। পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন নিয়মিত তা পরিদর্শন করে আসছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে জানান, যেসব শিল্প কারখানা নদ-নদীসহ পরিবেশ দূষণ করে আসছে। ওইসব কারখানাকে জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নদ-নদী রক্ষায় শিল্প মালিকদের সচেতন হবে। দূষণকারী শিল্প কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদফতরের অভিযান অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ সময়:০৬৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
আরএস/এএটি