ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মিনারেলের বোতলে ট্যাপের পানি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
মিনারেলের বোতলে ট্যাপের পানি! মিনারেল ওয়াটারের বোতলে ট্যাপের পানি/ ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ফেব্রুয়ারি আসতেই রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। আর বাড়তি তাপমাত্রার সাথে সাথে বাড়ছে বোতলজাত পানির চাহিদা। যানজটে বসে অথবা কোথাও বেড়াতে গিয়ে তৃষ্ণা মেটাতে মানুষ খুঁজতে শুরু করেছেন বিশুদ্ধ পানি। কিন্তু ঢাকায় ওয়াসা কিংবা খোলা স্থানের পানিতে ভরসা নেই নগরবাসীর। এজন্য বোতলজাত পানির কদর রাজধানীতে সবসময়ই বেশি।

কিন্তু বোতলজাত পানির ওপর মানুষের আস্থাকে পুঁজি করে ধোঁকাবাজিতে মেতে উঠেছেন মিরপুর চিড়িয়াখানার হকাররা। সেখানে বিশুদ্ধ পানির পরিবর্তে ট্যাপের পানি বোতলজাত করে বিক্রি করছেন তারা।

অথচ চিড়িয়াখানার মধ্যে হকারদের প্রবেশই নিষিদ্ধ!দেয়াল টপকে পানি ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঢুকছে হকাররা।  ছবি: জিএম মুজিবুরসোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) যশোর থেকে ঘুরতে আসা হারুনুর রশিদকে চিড়িয়াখানার মসজিদের সামনে বেশ উত্তেজিত দেখা যায়। যশোরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছেন।

কাছে গিয়ে তার রাগের কারণ জানতে চাইলে হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, তিনি সন্তানদের জন্য এনিম্যাল কোয়ারেন্টাইন ভবনের সামনের হকারের কাছ থেকে এক বোতল পানি কিনেছেন। এখন দেখেন বোতলের মুখ খোলা।

হারুনুর রশিদের পানির বোতল দেখে নতুন মনে হলেও বোতলে কোনো সেফটি প্লাস্টিক লাগানো ছিলো না। খোঁজ নিতে এনিম্যাল কোয়ারেন্টাইন ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে দুটি প্রাণের এবং একটি শ্যামলীর আধা লিটারের পানির বোতল নিয়ে বসে আছেন এক হকার। বোতলের পানি ফ্রিজিং করায় একেবারে বরফ হয়ে আছে। খেয়াল করে দেখা গেছে বোতলগুলোর মুখ খোলা।

প্রাণ কোম্পানির পানির বোতলের মুখ খোলা কেন জানতে চাইলে উত্তর দিতে গড়িমসি করেন ওই হকার। এক পর্যায়ে সুমন নামে ওই হকার বলেন, এগুলো সব ট্যাপের পানি। চিড়িয়াখানার ট্যাপ থেকে ভরেছি, পানি ভালো। আমি তো কোম্পানির পানি বলে বিক্রি করছি না। দামেও সস্তা, প্রতি বোতল ১০ টাকা।

পরে চিড়িয়াখানার ভিতরের আরো নানা অংশ ঘুরে দেখা গেছে ৬-৭টি গোপন পথের মাধ্যমে হকাররা ভিতরে প্রবেশ করছেন। কোথাও গাছ বেয়ে দেয়াল টপকে, আবার কোথাও ভাঙা সীমানা প্রাচীরের ফাঁকা দিয়ে চিড়িয়াখানার ভিতরে আসছেন তারা। কিন্তু এসব স্পটের কোথাও চিড়িয়াখানার পাহারাদার দেখা যায়নি।

চিড়িয়াখানার উত্তর পাশের ভারতীয় সিংহ’র খাঁচার পেছনের দেয়াল টপকে কয়েকজন হকারকে পণ্যসামগ্রী নিয়ে ভিতরে আসতে দেখা যায়। সেখানেও কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি।

একইভাবে ঘড়িয়ালের খাঁচা এবং এনিম্যাল কোয়ারেন্টাইন ভবনের পাশে মানুষ চলাচলের আরো দুটি পথ রয়েছে। সেখানেও কোনো নিরাপত্তা প্রহরী নেই। এসব পথ দিয়ে প্রতিদিন শত শত হকার চিড়িয়াখানার ভিতরে আসেন বলে অভিযোগ করেন কোয়ারেন্টাইন ভবনের ক্যান্টিন ইনচার্জ হাসানুজ্জামান।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি করে চিড়িয়াখানার মধ্যে আমরা দুটি ক্যান্টিন নিয়েছি। চুক্তিতে উল্লেখ আছে ভিতরে কোনো হকার প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু এখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অসাধু প্রহরীরা হকারদের থেকে সুবিধা নিয়ে তাদের ভিতরে আসতে দেন।

কিছু নিরাপত্তাকর্মী অসাধু রয়েছে স্বীকার করে মিরপুর চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি সকল বিভাগকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।

এ সময় চিড়িয়াখানার ট্যাপের পানি বোতলে করে বিক্রি করা হচ্ছে শুনে ডেপুটি কিউরেটর বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, হকার ভিতরে আসা একেবারেই নিষেধ। তারপরেও তারা কীভাবে ভিতরে আসে সেটা দেখা হবে। আর নিরাপত্তাকর্মীরা যাতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন সেটাও দেখব।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এসআইজে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।