ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফসলি জমিতে ইটভাটা, উৎপাদন কমেছে ৭৫ হাজার মণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
ফসলি জমিতে ইটভাটা, উৎপাদন কমেছে ৭৫ হাজার মণ মেহেরপুরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা

মেহেরপুর: দুই বা তিন ফসলি কৃষি জমিতে কোনোভাবেই ইটভাটা গড়ে উঠতে দেওয়া যাবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন কঠোর নির্দেশনা থাকলেও মেহেরপুর জেলায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ বছর মেহেরপুরে প্রায় দুই হাজার বিঘা কৃষি জমি গ্রাস করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা।

সূত্র মতে, জেলায় বর্তমানে পরিবেশবান্ধব ১৫টি, ব্যারেল চিমনির ৩৬টি ও স্থায়ী চিমনির ইটভাটা রয়েছে ৪৫টি।

ইটভাটার জন্য ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই এর সনদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসক প্রদত্ত লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভাটা স্থাপন করার আইন জেলায় চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, হাওয়ায় ইটভাটার মালিকরা প্রতি বছর ভাটা প্রতি তিন লাখ ৯৬ হাজার টাকা ভ্যাট দিচ্ছে। আর এসব ইটভাটা থেকে সরকার এক কোটি ২০ লাখ টাকা ভ্যাট পাচ্ছে। অথচ অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাটাগুলো থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

জানা গেছে, স্থায়ী চিমনির ইটভাটাতে প্রতি মৌসুমে ৪০ হাজার মণ, টিনের চিমনিতে ২৫ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ হিসেবে জেলায় প্রতি মৌসুমে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর এসব কাঠের যোগান দিতে উজাড় করা হচ্ছে জেলার বনাঞ্চল।

তৈরি করে রাখা ইটপরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের সিনিয়র কেমিস্ট্র মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মেহেরপুর জেলায় ১২০ ফুট চিমনির ৪০টি ও ড্রাম চিমনির ৩৬টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের কোনো লাইসেন্স নেই। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নেই। জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান চালাতে হয়। তাই নিয়মিত অভিযান চালানো হয় না।

জেলা কৃষি উপ পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, ইটভাটা করায় এসব জমি থেকে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার মণ আউশ, আমন ধান ও গমের উৎপাদন কমেছে।

ইটভাটা বাড়ার কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। ফলে খাদ্য উদ্বৃত্ত মেহেরপুর জেলা আগামীতে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০০১ সালের কৃষি শুমারি অনুযায়ী এ জেলায় আবাদী জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ১২৪ হেক্টর। বর্তমানে আবাদী জমির পরিমাণ ৫৮ হাজার ৫০৭ হেক্টর বলে জানান মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা পরিপত্র (২০ অক্টোবর ২০০৩) অনুযায়ী ইটভাটায় ১২০ ফুট উঁচু চিমনি স্থাপন বাধ্যতামূলক।

এছাড়াও ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (৪ ধারার ৫ উপ-ধারা) অনুযায়ী আবাসিক এলাকা, উপজেলা সদর ও ফল বাগানের আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু এখানে ঘনবসতি ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এতে ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া অতি সহজেই লোকালয় ও ক্ষেত-খামারে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন।

অবৈধভ‍াবে গড়ে ওঠা ইটভাটানিয়মনীতি উপেক্ষা করে এক শ্রেণির ভাটা মালিক তাদের ইচ্ছেমত ইটের ওজন ও সাইজ তৈরি করে অবাধে বিক্রি করছেন। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ইটের পরিমাপ ৭.৩০ এবং ৩.৭৫ ইঞ্চি হওয়ার কথা।

এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়ে কৃষি সম্প্রাসরণ বিভাগের উপ পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনাটি মেহেরপুর জেলা উন্নয়ন ফোরামের সভায় তোলা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা পর্যালোচনার পর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তারপরও দিনের পর দিন অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে উঠছে। এর কারণ আমরা বলতে পারবো না।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বাংলানিউজকে জানান, ‘মাঝে মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় বিভিন্ন অভিযোগে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে গত বছর কিছু অভিযান চালাতে গিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। তারপরেও এ বছর আর যেন কোনো ইটভাটা গড়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসন ভূমিকা নিয়েছে। ’

নির্দেশনা না মানা এসব ভাটায় খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।