চলাচলের সহায়তার পাশাপাশি এই পা দিয়েই সফলতা অর্জন করেছেন ইবতেদায়ি ও জেডিসি পরীক্ষায়। উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে এখন আর একটা জিপিএ-৫ এর জন্য দিচ্ছেন দাখিল পরীক্ষা।
উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র বেল্লাল আকন এবার দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের নেছারউদ্দিন সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে।
শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়েও মায়ের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলেছেন তিনি। বিদ্যালয় থেকে শুরু করে গোটা এলাকা জুড়ে মেধাবী ও উদ্যোমী বেল্লালের পায়ের জাদুর গল্প এখন সবাই জানে।
বেল্লালের সহপাঠীরা জানান, সবাই যখন স্বাভাবিক নিয়মে বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দেয় তখন বেল্লাল দু’পায়ে কাঠের বিশেষ আসনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা দেয়। আর হাত নয় ডান পা দিয়েই লিখে চলে বেল্লাল।
বেল্লালের বাবা-মা জানান, ছেলের দু’টি হাত নেই, তবে হাঁটুবিহীন দু’পা রয়েছে। প্রথমে এ নিয়ে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছিলো। নানা রকমের অপকথা ছড়াতে থাকে গ্রামের লোকজন। এসব কারণে প্রথমদিকে বেল্লালকে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখতেন। পরে এক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় তার মা ছেলেকে লেখাপড়া করানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকেই ঘরে বসে বেল্লালকে পড়াতে আর পায়ের আঙুলের মধ্যে চক দিয়ে সিলেটে লেখা শেখানোর অভ্যাস তৈরি করেন। এরপর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের উমেদপুর মাদ্রাসায় তাকে ভর্তি করা হয়। আর এখন তো সেই পা দিয়ে লিখে অসাধ্যকে সাধন করে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
মা হোসনে আরা বেগম বলেন, বেল্লাল তার সাহায্য ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে পারে না। তাই দাখিল পরীক্ষার পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য সবাই অন্যত্র চলে গেলেও হয়তো সে শহুরে কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার জন্য যেতেও পারবে না।
তবে সহপাঠীরা বলছে, বেল্লাল যেখানেই পড়ুক সে ভালো ফলাফল অর্জন করবেই।
বেল্লাল বলেন, ২০০৮ সালে প্রথম শ্রেণিতে পড়া শুরু করার পর বহুবার মাদ্রাসায় যেতে-আসতে আহত হয়েছি, মাথাও ফেটেছে একবার। তারপরও পিছপা হইনি। ইবতেদায়ি ও জেডিসির পর দাখিলেও ভালো ফলাফলের আশা রাখি। আর লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে চাই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। যে পেশায় প্রবেশের মধ্য দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের লেখাপাড়ার সুযোগ করে দিতে চাই।
উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. হাবিবুল্লাহ জানান, বেল্লাল শারিরীকভাবে স্বাভাবিক মানুষের মতো না হলেও মেধায় বহু মেধাবীর থেকে এগিয়ে। পাঠগ্রহণে তার পরিশ্রম আর ত্যাগ অনেক।
তার পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ দেখে একটি এনজিও বিদ্যালয়ে একটি সিঁড়ি তৈরি করে দিয়েছে। আবার ক্লাসরুমেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে কাঠের বিশেষ আসন। সেখানে বসেই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বেল্লাল স্বাভাবিকভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যায়।
জেডিসি’র মতো বেল্লাল দাখিল পরীক্ষায়ও মাদ্রাসার সুনাম রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই সুপার।
বেল্লালের বাবা খলিল আকন বলেন, দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে, আর বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে পড়ুয়া বড় ছেলের গতি হয়ে যাবে। এখন যতো চিন্তা ছোট ছেলেকে নিয়ে, সে যতদূর পড়তে চায় ততদূর পর্যন্ত নিয়ে যাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এমএস/আরআর