ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাছ আর ‘মাছ’ মিষ্টি ঘিরে যত উৎসব

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
মাছ আর ‘মাছ’ মিষ্টি ঘিরে যত উৎসব মাছ মিষ্টি/ছবি: আরিফ জাহান

গাবতলীর (বগুড়া) পোড়াদহ মেলা থেকে: দলবেঁধে মানুষ ছুটছেন মেলার মাছপট্টির দিকে। দরদাম করে সাধ্যের মধ্যে কিনছেন নিজের পছন্দের মাছটি। তবে সবার নজরই থাকছে বড় মাছগুলোর দিকে। কেনার সামর্থ্য সবার না হলেও একবার দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। একইভাবে মাছ কেনার পর সবাই ছুটছেন মিষ্টি পট্টির দিকে। সেখানেও রয়েছে বড় মাছ! তবে এই মাছ জ্যান্ত নয়, মাছের আদলে তৈরি বড় মিষ্টি!

বরাবরের মতই মেলার ঐতিহ্য মাছের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে বড় বড় ‘মাছ’ আকৃতির মিষ্টি। যা সবার কাছে ‘মাছ মিষ্টি’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত।

আর বাহারি এসব মিষ্টির ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে মেলার চারপাশে।  
 
সবমিলে মাছের পাশাপাশি বাহারি মিষ্টির আলাদা একটা সুনাম রয়েছে এ মেলায়। তাই মাছ ‘মাছ’ মিষ্টি ঘিরে চলে যত উৎসব।
 
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় অনুষ্ঠিত ‘পোড়াদহ’ মেলায় নিমন্ত্রণে আসা জামাই, স্বজন, বিভিন্ন মাছ ও মিষ্টির দোকানির সঙ্গে কথা হলে উঠে আসে এসব তথ্য।
বড় মাছ পেয়ে খুশি ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই 
মেলা গ্রাম-বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। আর পোড়াদহ মেলাটি প্রায় ৪শ বছরের পুরনো। স্বভাবতই স্থানীয় ও আশপাশের লোকজনের কাছে এ মেলার আলাদা একটি ঐতিহ্য বহন করে।
 
বংশ পরম্পরায় প্রতি বছর মেলা উপলক্ষে স্থানীয়রা জামাই-মেয়ে, স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন। তবে তালিকার শীর্ষে থাকে নতুন জামাই-বউ। মেলা করতে শ্বশুর-শাশুড়ির পক্ষ থেকে জামাইবাবুদের সেলামি দেওয়ার প্রচলন এখনও অটুট রয়েছে। যে যার মত সাধ্যানুযায়ী জামাইয়ের হাতে মেলায় যাওয়ার জন্য সেলামির টাকা তুলে দেন।
 
পক্ষান্তরে জামাইরা নিজের গচ্ছিত টাকা সেই সেলামির টাকার সঙ্গে যুক্ত করে শ্যালক-শালিকাদের নিয়ে মেলায় যান। তবে তাদের দৃষ্টিটা থাকে মাছ ও মিষ্টি ঘিরে। মেলার প্রধান দুই আকর্ষণ কেনার পরই চলে ঘোরাঘুরির পর্ব। এরপর মাছ ও মিষ্টি নিয়ে সোজা শ্বশুরালয়ে ছোটেন তারা।
মেলায় মাছ মিষ্টি বিক্রেতা 
মেলায় নিমন্ত্রণে আসা জামাই মো. মিঠু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তিনি ১৮ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ কিনেছেন। ৯শ টাকা কেজি হিসেবে মাছটির দাম পড়েছে ১৬ হাজার ২শ টাকা। ১২শ টাকা কেজি হিসেবে ৫ কেজি ওজনের কাটা বাঘাইড় মাছও কিনেছেন।
 
তিনি আরও জানান, মাছ আকৃতির ৫ কেজি ওজনের দু’টো মিষ্টি কিনেছেন। সাড়ে ৪শ কেজি হিসেবে মিষ্টিগুলো কিনেছেন তিনি। এরপর মেলায় কিছুটা সময় ঘোরাঘুরি করবেন। তারপর সোজা শ্বশুরালয়ে গিয়ে শুরু হবে রান্নাবান্নার পর্ব। সবাই মিলে মাছ ও মিষ্টি খাওয়া হবে। পাশাপাশি চলবে আনন্দ-উল্লাস।  
 
আব্দুল হান্নান, শামীম সরকারসহ একাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, মেলায় এবার বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আমদানি ঘটেছে। এরমধ্যে যমুনার মাছসহ বিভিন্ন জলাশয়ে চাষের মাছ রয়েছে। তবে সবার নজর বড় মাছের দিকে থাকলেও মাঝারি ওজনের মাছের চাহিদা বেশি।  
 
আব্দুল লতিফ, আব্দুল মোমিনসহ একাধিক মিষ্টি দোকানি বাংলানিউজকে জানান, মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ। তাই মাছকে প্রাধান্য দিয়ে প্রত্যেক বারের মতো এবারও ৫-১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরি করা হয়েছে।  

এছাড়া সব ধরনের মিষ্টান্ন সামগ্রী রয়েছে মেলায় আসা দোকানগুলোয়। বেচাবিক্রিও বেশ ভালো বলেও জানান এসব দোকানি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এমবিএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।