বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ১ হাজার ৭৩৩ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক, ৫১৫ জনকে মাস্টার্স অব সায়েন্স এবং একজনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেন।
ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, নিজেদের তোমরা জ্ঞান-দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেছ। পেশাগত শিক্ষালাভের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ শাণিত করার সুযোগ পেয়েছ। এসব সম্ভব হয়েছে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। এভাবে তোমাদের অনেক ঋণ জমে গেছে দেশ ও জাতির কাছে। এখন তোমাদের এই ঋণ পরিশোধের পালা।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে বর্তমান সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ এর পথচিত্র অনুসরণ করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে চলেছে। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন যুদ্ধে জয়লাভের জন্য কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে কৃষির ভূমিকা আজও মুখ্য। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরিতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, মাছ-মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলেছে। সরকারের বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
কৃষিখাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কৃষিবিদরা কাজ করে চলেছেন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে তারা পরিবেশ প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারেও ভূমিকা রাখছেন। কৃষিতে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে কৃষক পর্যায়ে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান যুগ হচ্ছে বিশ্বায়ন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির যুগ। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তার আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকতে হলে তার স্থানিক, জাতিক ও বৈশ্বিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। এটি সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক উপযোগিতা, মান ও আন্তর্জাতিক চারিত্র্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে। আমি জেনে আনন্দিত, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তার লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে শিক্ষা ও গবেষণা তৎপরতায় এই চাহিদাগুলোর বিশ্বস্ত প্রতিফলনে বিশেষ যত্নবান।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাবর্তন বক্তা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. গোলাম শাহি আলম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বদরুল ইসলামের পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় রাষ্ট্রপতির হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন পিএইডি ডিগ্রি অর্জনকারী বদরুন্নেছা, মাস্টার্স পর্যায়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সের মাহফুজুর রহমান, কীটতত্ত্ব অনুষদের জিনাত জাহান চৌধুরী ও স্নাতক পর্যায়ে কৃষি অনুষদে আঁখি পাল চৌধুরী এবং মৎস্য অনুষদে পার্থ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
এনইউ/এমজেএফ