অধিক জনসংখ্যা, দ্রুত কৃষি জমি কমে যাওয়া, শিল্পায়নে জমির স্বল্পতা ও জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবেলায় নদীর মোহনায় ও সাগরে জেগে ওঠা নতুন ভূমিকে আগামীর বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের প্রাণ-প্রাচুর্যের বৈচিত্র্যময়তা রক্ষা, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রাকৃতিক সম্পদেরও বড় উৎস হবে এসব নতুন চর ও দ্বীপ।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে নতুন জেগে ওঠা চর ও দ্বীপকে বনায়নের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে নতুন চর ও দ্বীপগুলোয় ২০/৩০ বছরের মধ্যে ভূমির মান উন্নত হবে এবং দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে। পরবর্তীতে এ ভূমি প্রয়োজন অনুসারে পরিকল্পিত আবাসন, শিল্পায়ন ও পর্যটনের কাজে ব্যবহার করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এরইমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে জেগে ওঠা নতুন চর ও দ্বীপে বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। নতুন চরে বনায়নের সময় লবণ সহিষ্ণু জাতের ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো হবে। পুরনো চরে অন্যান্য গাছের সঙ্গে পাখিদের খাদ্যের যোগান দিতে নিম, বটসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এরইমধ্যে ‘চর উন্নয়ন’ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে পাওয়া যাবে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমির ক্ষয় ও ভাঙ্গন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে মেঘনা নদী হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রাপথে প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে যা উপকূলের কাছাকাছি ক্রমান্বয়ে জমা হয়ে নদী ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন চরের সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় গত দুই দশকে দুই হাজার বর্গকিলোমিটারের নতুন চর সৃষ্টি হয়েছে। এসব চরাঞ্চলের ভূমিকে স্থায়ী করার জন্য বনায়ন জরুরি।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যখন বাংলাদেশের বিরাট অংশ সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঠিক সে সময়েই বঙ্গোপসাগরের বুকে দেখা দিয়েছে আরেক বাংলাদেশের হাতছানি। সেখানে সমুদ্রের অথৈ জলে প্রাকৃতিকভাবেই বিশাল বিশাল চর জেগেছে, গড়ে উঠেছে মাইলের পর মাইল ভূখণ্ড। দীর্ঘদিন ধরে শুধুই ‘ডোবা চর’ হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকটি চরভূমি ইতিমধ্যে স্থায়ী ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। সেসব স্থানে জনবসতিও গড়ে উঠেছে। একই ধরনের আরও প্রায় ২০টি ‘নতুন ভূখণ্ড’ এখন স্থায়িত্ব পেতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরে দুই-তিন বছর ধরে জেগে থাকা এসব দ্বীপখণ্ড ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না, বরং দিন দিন বেড়ে চলছে এর আয়তন।
উপকূলীয় এলাকায় গবেষণাভিত্তিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম), অ্যাকচুয়ারি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইডিপি) ও সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) এর মতো সংস্থাগুলোর মতে, শিগগিরই আরও বিপুল আয়তনের ভূখণ্ড বাংলাদেশের মানচিত্রে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ মুহূর্তে পানি ও পলির ক্ষেত্রে কিছু প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া খুব জরুরি। সমুদ্র বুকে জেগে ওঠা ৪০ হাজার হেক্টর ভূমিকে এখনই স্থায়িত্ব দেওয়া সম্ভব। পর্যায়ক্রমে এর পরিমাণ দুই লক্ষাধিক হেক্টরে বিস্তৃত হতে পারে। সেখানে বসবাস, চাষাবাদ ও বনায়নের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।
নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত অ্যাকচুয়ারি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইডিপি) এক জরিপ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত শুধু নোয়াখালী উপকূলেই সাড়ে ৯০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি জেগে ওঠে। নিঝুম দ্বীপ থেকে ৩৫-৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাটার সময় বড় বড় চরভূমির অস্তিত্ব থাকার তথ্য জানতে পেরেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮
আরএম/এমজেএফ