ওই সময় বাংলাদেশের বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার পরিবারের সদস্যদের নামও প্রকাশ পায়। আলোচনায় ছিল আরও কয়েক ব্যবসায়ীর নামও।
এবার প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে এসেছে দেশে বিভিন্ন সময় নানা কারণে ‘বিতর্কিত’ ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের নাম। তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টায় কোম্পানি খুলেছেন আলোচিত এ ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েক ব্যবসায়ীর নামও।
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ‘প্যারাডাইস পেপারস’ কেলেঙ্কারির সাম্প্রতিক তথ্যে এসব নাম এসেছে।
এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত অর্থ পাচারের আরেক আলোচিত অনুসন্ধান ‘পানামা পেপারসে’ ২৪ জন বাংলাদেশির নাম এসেছিল।
এরপর গত বছরের নভেম্বরে বের হয় ‘প্যারাডাইস পেপারস’ নামে নতুন কেলেঙ্কারি। এ কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত আটটি অঞ্চলের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন করে পাওয়া গেল মুসা বিন শমশেরসহ আরও ২০ জনের নাম।
ফাঁস করা তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশি এসব ব্যবসায়ীর নামের সঙ্গে দেশ-বিদেশের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ কেউ নিজের নামে, কেউ ভিনদেশির নামে, কেউ আবার দেশ-বিদেশের একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে মাল্টায় কোম্পানি খুলেছেন।
তারা শিপিং, বস্ত্র, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও শেয়ারবাজার ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মুসা বিন শমসের ভেনাস ওভারসিজ হোল্ডিংস নামের কোম্পানির পরিচালক এবং ঢাকার বনানীর ১ নম্বর ব্লকের একটি বাড়ি তার ঠিকানা দেখানো হয়েছে। ২০১০ সালে কোম্পানি নিবন্ধন করেন তিনি।
‘বিতর্কিত’ মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানও করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মোহাম্মদ এ আউয়াল নামের এক ব্যবসায়ী মাল্টায় তিনটি কোম্পানির নিবন্ধন নেন। বন্দরনগরীর লালখান বাজারের মাওলানা শওকত আলী সড়কের একটি বাসা তার ঠিকানা। ১৯৯৩ সালে নিবন্ধিত হয় শামস শিপিং লিমিটেড এবং ১৯৯৭ সালে নিবন্ধিত মারজান শিপিং ও কুয়ামার শিপিংয়ের পরিচালক।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ঠিকানা উল্লেখসহ এ ছাড়া তিন কোম্পানিরই পরিচালক দেখানো হয়েছে মোহাম্মদ এ মালেক নামের আরেক ব্যবসায়ীকে।
এদিকে গেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (এমটি) লিমিটেড নিবন্ধিত হয় ২০০৯ সালে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন ব্যবসায়ী। একজন ফারুক পালওয়ান, যার ঠিকানা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আজমিরীবাগে। অন্য দু’জন চাষাঢ়ার বালুর মাঠের তুহিন ইসলাম ও তাজুল ইসলাম।
ইন্টারপিড গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে ফারহান আকিবুর রহমান ও খন্দকার আসাদুল ইসলামকে। ফারহান আকিবুরের ঠিকানা রাজধানীর গুলশানের ৫১ নম্বর সড়কের একটি বাসা, আর খন্দকার আসাদুল ইসলামের ঠিকানা ঢাকার ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের একটি বাসা।
খন্দকার আসাদুলকে আলাদা করে ২০১৫ সালে নিবন্ধিত ইন্টারপ্রিড ক্যাপিটাল নামের একটি কোম্পানির পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার দেখানো হয়েছে।
মাল্টায় ২০০৯ সালে পদ্মা টেক্সটাইলের নিবন্ধন করেন আমানুল্লাহ চাগলা। তাকে ভারতীয় দেখানো হয়েছে এবং ঢাকার ঠিকানা দেওয়া আছে বারিধারা ডিওএইচএসের ৮ নম্বর লেনের একটি বাড়ি।
২০১৬ সালে নিবন্ধিত ডায়নামিক এনার্জি হোল্ডিংসের পরিচালক দেখানো হয়েছে ফজলে ইলাহী চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ীকে। তার ঢাকার ঠিকানা বারিধারা ডিওএইচএসের ৭ নম্বর সড়কের একটি বাসা।
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনপ্রবাসী মোহাম্মদ রেজাউল হক ২০১৪ সালে মিলেনিয়াম কলেজ মাল্টা লিমিটেডের নিবন্ধন নেন। একই বছর আয়ারল্যান্ডে থাকা মাহামুদ হোসেন নামের আরেকজন গ্লোবাল এডুকেশন লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানির নিবন্ধন করেন।
রাশিয়াপ্রবাসী আতিকুজ্জামানকে দেখানো হয়েছে নিউ টেকনোলজি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক। ২০১১ সালে নিবন্ধিত আতিকুজ্জামানের মস্কোর ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে, দেশের ঠিকানা উল্লেখ নেই।
বাংলাদেশ ও সুইডেনের নাম উল্লেখ করে এরিক জোহান এনডারস উইলসনের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি। তিনি ডব্লিউএমজি লিমিটেড নামের কোম্পানির নিবন্ধন নেন ২০০৯ সালে।
এ ছাড়া মোহাম্মদ কামাল ভূঁইয়া ২০০৮ সালে ভূঁইয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং কোম্পানি, ইতালিপ্রবাসী বাংলাদেশি ইউসুফ খালেক ২০১৬ সালের শেষ দিকে কে এ সার্ভিসেস এবং কে এ কনসালটেড নামের দুটি কোম্পানি, ঢাকার বনানী ডিওএইচএসের ঠিকানা উল্লেখ থাকা মাহতাব রহমান ২০০৩ সালে সেলকন শিপিং কোম্পানি এবং ঢাকার ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির ঠিকানা থাকা জুলফিকার আহমেদ ১৯৯৯ সালে খালেদা শিপিং নামের একটি কোম্পানির নিবন্ধন করেন।
আইসিআইজের প্রকাশিত বৃহস্পতিবারের (১৫ ফেব্রুয়ারি) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৯৩ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টায় কোম্পানিগুলো খোলা হয়। মূলত অর্থ পাচারের জন্যই এভাবে কোম্পানি খোলা হয়ে থাকে।
এর আগে প্যারাডাইস পেপারসের আওতায় উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের শহর অ্যাপলবি কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯ বাংলাদেশির নাম এসেছিল।
আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানে অর্থ পাচারের ঘটনায় একাধিক দফায় বাংলাদেশিদের নাম এলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনায় কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
যদিও পাকিস্তানসহ অনেক দেশই তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে। এমনকি এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদও ছাড়তে হয়েছে পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮
এমএ/