ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এ জমি আমার বাপ-চাচার কেহুক দহল নিব্যার দিমু না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
এ জমি আমার বাপ-চাচার কেহুক দহল নিব্যার দিমু না ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিরাজগঞ্জ: বাবার আমল থাইহ্যা যে ক্ষ্যাত আমরা চাষ কইরা খাইত্যাছি-হেই জমি দহল কইরা গুচ্ছগ্রাম বানাইতে চায় চেয়ারম্যান। প্রায় ২.৬৭ একর ফসলি ক্ষ্যাত। সব ফসলই আবাদ অয় এইহানে। আমাগের বাইশটি শরীক এ জমির ফসলের উপর নির্ভরশীল। ওই জমি চইল্যা গেলে আমাগোর বাঁচার কুন উপায় থাইকপো না।

ষাটোর্ধ্ব দেলবার ফকির নিজ জমিতে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন।

অদূরেই মাটিকাটার কাজ করছিল অর্ধ-শতাধিক শ্রমিক।

তিনি চিৎকার করে বলছিলেন এসব জমি আমার বাপ-চাচার। কেহুক দহল নিব্যার দিমু না।

অদূরেই বিষন্ন মুখে বসেছিলেন দেলবার ফকিরের ভাতিজি কাজলী ও তার অসুস্থ স্বামী সন্তোষ আলী। যমুনার ভাঙনে স্বামীর বাড়ির স্বর্বস্ব খুইয়ে ভাইদের দেওয়া জমিতে চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তিনি। কিন্তু সেই জমিতেই কোদালের কোপ পড়েছে।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাথালিয়াপাড়া গ্রামে সরেজমিনে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকথা হয় এ গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী কৃষক হাজী আয়নাল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ বছর আগে এই সম্পত্তি কোবাদ ফকির, আব্দুল ফকির ও জয়েন হাজী গংয়ের কাছ থেকে কেনেন দেলবার ফকিরের বাবা আবেদ ফকির। সেই থেকে আবেদ ফকিরের ওয়ারিশগন ভোগদখলে রয়েছেন।

একই কথা বলেন গ্রামের অপর চাষি নজরুল ইসলাম, আমোদ আলী, আবু সামা, সোহরাব সেখ, জেলহক ও রিয়াজ হোসেনসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক কৃষক। তাদের দাবি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই ফকির পরিবারই এ জমি চাষাবাদ করে আসছে।

এসব জমি ভোগদখলে থাকা কৃষক হাসেম আলী ফকির জানান, তার দাদা আবেদ আলী ফকির আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে পর্যায়ক্রমে ৫টি দলিল মূলে ২. ৬৭ একর জমি কেনেন। তখন থেকেই খাজনা-খারিজ করে ওইসব জমি আবেদ আলী ফকির ও তার ওয়ারিশগণ ভোগদখল করে আসছেন। গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে এসব জমি ইরি রোপণের জন্য প্রস্তুত করছিলেন কৃষকেরা। এ অবস্থায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা ওই জমিতে আসতে বাধা দেন তাদের।

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে হঠাৎ করেই মাটিকাটা শুরু হয়। যমুনা নদী থেকে মাটি এনে এসব জমি ভরাট করে গুচ্ছগ্রাম করা হবে বলে জানায় চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।

হাসেম আলী আরও জানান, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও আদালতে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তবুও জোরপূর্বক ওই জমি দখল করে মাটি ভরাটের কাজ করছে চেয়ারম্যানের লোকজন।

এ বিষয়ে কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা একটি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছি। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ একটি প্রকল্প। আর ওইসব জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় গুচ্ছগ্রামের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ভূমি অফিস।

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শাহজাদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাসিব সরকার জানান, কৈজুরি মৌজায় মোট একটি দাগে প্রায় ১৭ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩ একর খাস খতিয়ানভুক্ত। বাকি ১৪ একর মালিকানা সম্পত্তি। তবে ২০১২ সালে খাস খতিয়ানভূক্ত জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন সেখানেই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অভিযোগকারী কৃষকরা তাদের নিজের বাড়ির সামনের জমিগুলোকেই নিজেদের বলে দাবি করছে। কিন্তু সেটা ঠিক না। তাদের জমি একই দাগের অন্য কোথাও থাকতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেহেলী লায়লা বাংলানিউজকে বলেন, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করা হবে। তবে কোনো কৃষক যাতে এতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে নির্দেশনাও সরকারের রয়েছে। আমরা বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইখতিয়ার উদ্দিন শামীম বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।