ঢাকায় গত এক বছরে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং যে মাত্রায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাতে দুর্ঘটনার আশংকা বেড়েছে সে মাত্রায়। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে হরহামেশা উল্টো পথে চলে যাচ্ছে এসব মোটরসাইকেল।
মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশের বাজারে যতো সংখ্যক মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে তা অতীতে কোনো সময় হয়নি। ১৫টি ব্র্যান্ডের ৩ লাখ ৮৭ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি।
এই খাতের কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, এতো বেশি মোটরসাইকেল বিক্রির কারণ রাইড শেয়ারিং অ্যাপস। নগদ আয়ের পথ দেখে ঢাকার রাস্তায় কয়েক হাজার ‘ফুলটাইম বাইকার ড্রাইভার’ নেমে গেছেন। এদের অধিকাংশের মোটরসাইকেল চালনায় দক্ষতা নেই।
রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য তৈরিকৃত নীতিমালায় দেখা গেছে, নতুন মোটরসাইকেল কিনে কেউ রাইড শেয়ারিংয়ে আসতে পারবেন না। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখতে নীতিমালার ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে নীতিমালার আগেই ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার, পাঠাও, স্যাম, মুভ, সহজ, ইজিয়ারসহ কয়েকটি অ্যাপস বিভিন্ন অফার ছেড়ে মোটরসাইকেল বাইকার শ্রেণী বাড়াচ্ছে। রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত চলার প্রবণতা এবং পাশের প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের ক্ষতি করে চলছেন এসব বাইকার শ্রেণী।
মাহিন আশরাফ নামে একজন ব্যাংকার অভিযোগ করে বলেন, দু’দিন আগে বিজয় সরণি সিগন্যালের ২০০ গজ আগে একটি মোটরসাইকেল বাম পাশের অল্প একটু জায়গা দিয়ে ঢুকে পড়ে। বাইকটির হ্যান্ডেল প্রথমে তার নতুন প্রাইভেটকারের পেছনে ঘঁষা দিয়ে স্ক্র্যাচ ফেলে দেয়।
রহমতুন্নেসা নামে আরেকজনের অভিযোগ একই। তার প্রাইভেটকারের লুকিং গ্লাস ভেঙে দিয়েছে পাঠাও অ্যাপসের একটি বাইকার। উল্টো ওই বাইকার প্রাইভেটকারের দোষ হয়েছে ভাব দেখিয়ে দ্রুত সিগন্যাল পার হয়ে গেছে।
কিন্তু তিনি মোটরসাইকেলের মোবাইল রাখার হ্যান্ডেল এবং স্ক্রিনে ‘পাঠাও’ লোগো দেখে বুঝতে পেরেছেন বাইকার রাইড শেয়ারিংয়ের যাত্রী টানছেন। আর নাম্বার প্লেট যশোর মেট্রোর।
‘পাঠাও’ অ্যাপস ব্যবহার করে মোটরসাইকেলে একজন যাত্রী উত্তরা থেকে বনানী গেছেন। যাওয়ার পথে দুই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি। একটি প্রাইভেটকারের সামনে বাম্পারে যাত্রীর পা লেগে অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন।
এজাজ নামের ওই যাত্রীর অভিযোগ, ‘বাইকারের সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। কিন্তু তার হাত কাঁপানো চালানো দেখে বোঝাই যাচ্ছে চালানো শিখেছেন মাত্র। অথচ দাবি করছেন ২০১২ সাল থেকে বাইক চালাচ্ছেন’।
রাইড শেয়ারিং বিষয়ক বিশ্লেষক মুরাদ শুভ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং ধারণার পুরো উল্টো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে গেছে। রাইড শেয়ারিং মানে হলো যখন আপনি কোথাও যাবেন একই যাত্রাপথের অন্য একজন যাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। কিন্তু ঢাকার মোটরসাইকেল অ্যাপসগুলো বেশি ভাড়া ধার্য করায় ‘বাইকার’ একটি পেশা হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। যা ঝুঁকির কারণ। এ কারণে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকলেগুলোর নাম্বারপ্লেট দেখে বোঝা যাচ্ছে ঢাকার বাইরে থেকে আসা’।
বিআরটিএ নীতিমালা যদি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন এ বিশ্লেষক।
রাইড শেয়ারিং একটি অ্যাপের শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, রাইড শেয়ারিং এখন দাঁড়াচ্ছে মাত্র। ঢাকার বেশিরভাগ মোটরসাইকেল চালক যখন অ্যাপস ব্যবহার করা শুরু করে দেবেন তখন এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। নতুন বাইকার শ্রেণী অন্তর্ভুক্ত হবে না। তখন পছন্দ করা গন্তব্য অনুযায়ী বাইকার আরেকজন রাইডার পেয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মশিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মোটরসাইকেল বেড়ে যাওয়ায় রাস্তার জন্য ঝুঁকির কারণ হবে। যেসব অ্যাপস প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অভিযোগ আসছে এগুলো খতিয়ে দেখা হবে। কিছুদিন পর যখন অনুমোদনের প্রক্রিয়া আসবে তখন কঠোর হতে হবে। তখন ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব অ্যাপসের কার্যক্রম শাস্তিমূলকভাবে সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাইড শেয়ারিং সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যে ঢাকায় এখন দিনে ১০ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং হচ্ছে। যা দিনে দিনে বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
এসএ/জেডএস