২০১৫ সালে বিশ্ব দরবারে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) চূড়ান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কিন্তু শুধু বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই আন্তরিকতাই সমস্যা সমাধান করতে পারছে না। কারণ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা নির্দিষ্টভাবে কোন খাতে ব্যয় হবে তার কোনো উল্লেখ নেই। এমনটাই জানিয়েছেন শিশুশ্রম বন্ধে ও শিশুদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ভিশন (এনজিও) একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশ করেছে, বিশ্বে প্রতিদিন পরিবারের প্রতি ১০ জনে ৬ জন শিশু শারীরিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কিছু বিদ্যালয়েও খারাপ ফলাফলের জন্য বা শাসনের জন্য শারীরিক শাস্তি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮২ শতাংশ শিশু বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হয় ১৪ বছর বয়সে পা দেওয়ার আগেই। শতকরা ৭৭ দশমিক ১ ভাগ শিশু বিদ্যালয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এছাড়া ৫৭ শতাংশ শিশু কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশু নির্যাতনের কারণ হিসেবে ধর্মীয়, প্রথাগত ও সাংস্কৃতিক রীতি, শিশু অধিকার সচেতনতায় শৃঙ্খলাবোধের অভাব এবং শিশু সুরক্ষা আইনের দুর্বল প্রয়োগকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের ডেপুটি ডাইরেক্টর সাবিরা নূপুর বলেন, শিশুরা সবচেয়ে বেশি অমানসিক পরিস্থিতিতে পড়ছে তার নিজের পরিবারের কাছে। তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে অনেক কিছুই তার ওপর চাপিয়ে সেটা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। নির্যাতন ছাড়াও পরিবারে একটি শিশু যে কাজটা পারছে না তা তার বাবা-মা তাদের শখ পূরণের খাতিরে হলেও করিয়ে ছাড়ছে। এতে করে ওই শিশুর ওপর মানসিক অত্যাচার হচ্ছে। এসব বন্ধে সরকারের নজরদারির পাশাপাশি আমাদের নিজেদেরও সংশোধন হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি’র (সিবিপি) পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ শিশুদের জন্য বরাদ্দ বাজেটের পরিমাণ জাতীয় বাজেটে সহজে ট্র্যাক করার জন্য আলাদা কোডের সুপারিশ করেছেন। ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে বাজেট বরাদ্দের উপর এক গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে এই সুপারিশ করেন তিনি।
শিশুদের জন্য বরাদ্দ বাজেট সম্পর্কে সাম্প্রতিক তথ্য প্রতিবেদন তৈরি করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও গঠনের সুপারিশ করেন তিনি। এছাড়া তিনি শিশু উন্নয়নে কাজ করার জন্য বেসরকারি খাত, সিভিল সোসাইটি এবং এনজিওগুলোকে শিশু অধিকারের ব্যাপারে প্রচারণারও সুপারিশ করেন। শিশুদের প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনায় কিভাবে বাজেট আরও বাড়ানো যায় তারও একটি দিকনির্দেশনা দেন।
অভিভাবকরাও মনে করেন যদি এভাবে মানসিক বিকাশ ছাড়াই শিশুরা বেড়ে ওঠে তাহলে আগামীতে দেশ নিয়ে শঙ্কা থাকবে। মিরপুরের মনিপুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরোজার বাবা রহিম সরকার। তিনি বলেন, আমি বাচ্চাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দেই না। তাতে করে অনেক সময় কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হলেও তাদের মানসিক বিকাশের কথা ভাবি। কিন্তু শিশুদের ওপর মানসিক সহিংসতায় যাওয়ার মতো অভিভাবকের সংখ্যাও কম নয়। এ সমস্যা থেকে আমাদের নিজেদেরই উঠে আসতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
এমএএম/আরআর