এর অংশ হিসেবে গুলশান পুলিশ প্লাজা এলাকার ফুটপাতে টাইলস বসানো হয়। কিন্তু দিন দশেক না ঘুরতেই সরতে ভাঙতে শুরু করেছে এসব টাইলস।
এলাকার বাসিন্দারা অনেক ধুলোবালির ঝাপটা আর ভোগান্তি সয়ে এসব ‘সৌন্দর্য বর্ধন’ কাজে সন্তোষ দেখালেও এখন চাপড়াচ্ছেন কপাল। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, ফুটপাতে ভারী যানবাহন উঠিয়ে দেওয়ার কারণে এই ভাঙন দেখা যাচ্ছে। তবে ‘সিকিউরিটি পিরিয়ডে’ ক্ষতিগ্রস্ত টাইলসগুলো সংস্কার করে ফেলা হবে।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গুলশান পুলিশ প্লাজার অদূরে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের কার্যালয় সংলগ্ন ফুটপাত ঘুরে ‘সৌন্দর্য বর্ধন’ কাজের এই ভগ্নদশা দেখা যায়।
কয়েকজনের সঙ্গে আলাপে জানা গেলো, সিমেন্ট ও বালুর সংমিশ্রণে সাদা টাইলসগুলো ফুটপাতে বসানো হয় ১০ দিন আগে। এ ক’দিনে সিমেন্ট ও বালু সরে খুলে খুলে যাচ্ছে অনেক টাইলস। কোথাও পা রাখলে নিচের দিকে দেবেও যাচ্ছে। এলাকায় নিয়মিত অফিস করা লোকজন বলছিলেন, টাইলস বসানো হলেও সংরক্ষণসহ পরবর্তী কার্যক্রম ঠিকভাবে দেখভাল না করার কারণে এই ভগ্নদশা। বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরটির কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ১০ দিন হয়েছে টাইলসগুলো বসানোর, এর মধ্যেই ভাঙতে বা সরতে শুরু করেছে। মানুষের পায়ের চাপেই টাইলস দেবে যায় (নিচের দিকে বসে যায়)। আর দিন দশেক টাইলসগুলো ফুটপাতে থাকবে কি-না সন্দেহ আছে। ’
অথচ টাইলস বসিয়ে ফুটপাত সুন্দর করার জন্য এন্তার দুর্ভোগ মুখ বুজে সয়েছেন এলাকাবাসী ও অফিসগামী লোকজন। সড়ক খোড়াখুঁড়ি, ফুটপাত তুলে ফেলায় হাঁটাচলা করতে যেমন ভুগতে হয়েছে, তেমনি হজম করতে হয়েছে ধুলোবালি।
এদিকটায় টাইলস ভেঙে গেলেও কয়েক গজ দূরে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ৬ নম্বর প্লটের সামনে একইভাবে টাইলস বসাচ্ছিলেন ১০ শ্রমিক। কেউ বালি-সিমেন্ট মেশানোর কাজে ব্যস্ত, কেউ টাইলস বসানোয়।
তবে ১০ দিনেই টাইলস ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে ফাতিমা নামে এক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘টাইলস লাগানোর পর মুছপো (মোছা হবে)। ফাঁকা জায়গা বন্ধ করোনে (করতে) আঠা-উঠা (সিমেন্ট-বালির মিশ্রন) দেবো। কিন্তু সেইডা করার সুময় কই, যে সুময় টাইলস লাগাইছি, সেই কাঁচা টাইলসের ওপরে গাড়ি উঠছে, মানুষ জন হাঁটছে। আমরাতো আর ভাঙা টাইলস লাগাই নাই। ’
প্রয়াত আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজধানীর অভিজাত এলাকাটির সৌন্দর্য বর্ধনে ‘গুলশান, বনানী ও বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ নিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে গৃহীত ১৯৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির আওতায় এ এলাকার ১০টি ওয়ার্ডের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, প্রায় ৫৬ কিলোমিটার খোলা ড্রেন নির্মাণ, ২৫ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে। চলছে ৫৬ দশমিক ৪১৫ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নকাজ। এরই আওতায় বসানো হচ্ছে টাইলস।
সৌন্দর্য বর্ধন কার্যক্রমের এই ভগ্নদশার ব্যাপারে প্রকল্পটি দেখভালে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএনসিসি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) শরিফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, টাইলস সবে মাত্র বসানো শুরু করেছি। এখনই ভেঙে যাচ্ছে, কথাটি সঠিক নয়। আমরা বিলকমের উন্নতমানের টাইলস ব্যবহার করছি।
তবে তিনি টাইলসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য যানবাহনের চালকদের দায়ী করেন। বলেন, টাইলস বসানোর পর ৭২ ঘণ্টা সুরক্ষিত রাখতে হয়। কিন্তু যানবাহনের চালকেরা ৭২ ঘণ্টা দূরের কথা, পাঁচ ঘণ্টাই অপেক্ষা করেন না। টাইলসের এ ফুটপাত মানুষ চলাচলের জন্য হলেও এসবের ওপর উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারী ট্রাক। ভারী বাহনের চাকা উঠলে ভাঙাই স্বাভাবিক।
শরিফ উদ্দিন জানান, প্রকল্পের জন্য ‘সিকিউরিটি পিরিয়ড’ (বাড়তি সময়) আছে। যেখানে টাইলস ভাঙছে বা সরছে, সেখানে মেরামত করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/