বছরের চার/পাঁচ মাসে শুধু ফুলের চারা বিক্রি করে আয় করেন দুই লাখ টাকা। আর বাকি সময়ে অন্যান্য চারা উৎপাদন করেও লাখ লাখ টাকা আয় হয় তার।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিবনাথপুর গ্রামের নাসির উদ্দিনের সাফল্য দেখে ফুল চাষ শুরু করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী।
এমনই একজন শাহ আলী। তিনি জানান, গত ডিসেম্বর মাসে মোট ৫০ শতক জমিতে তিনি ফুলের চাষ শুরু করেছেন। এর মধ্যে ৩০ শতক নিজের, বাকিটা লিজ নেওয়া। তাতে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আর উৎপাদন করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকার ফুলগাছ।
একই এলাকার আলেয়া খাতুন জানান, তার স্বামী আব্দুর রহমানও ফুলগাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ফুলের পাশাপাশি মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, আম, কাঁঠাল, লিচুর চারাও উৎপাদন হয় তাদের নার্সারিতে।
আব্দুল মান্নান, আব্দুল হালিম, ইউনুছ আলী, রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাসহ এ গ্রামের অন্তত অর্ধ শতাধিক কৃষক ফুলের চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আগে রিকশা চালিয়ে, কৃষি দিনমজুর দিয়ে অথবা তাঁত শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নিজের সামান্য জমি কিংবা অন্যের জমি বাৎসরিক চুক্তিতে লিজ নিয়ে ফুলগাছের চারা উৎপাদন করেন তারা।
অক্টোবর মাসের প্রথমদিকে চাষিরা দেশি গোলাপ, বিদেশি গোলাপ, চাইনিজ গাঁদা, হাইব্রিড গাঁদা, দেশি গাঁদা, বর্ষালী গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, জবা, গেটফুল, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুলগাছের চাড়া উৎপাদন শুরু করেন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এসব ফুলের চারা বিক্রি হয়। তাদের সাফল্য দেখে সারটিয়া, হামকুড়িয়া, শিয়ালকোলসহ আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকেরাও ফুলচাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান তারা।
শুধু ফুলের চারা নয়, পহেলা ফাল্গুন, ২১ ফেব্রুয়ারিসহ বিশেষ বিশেষ দিনকে সামনে রেখে তারা ফুল বিক্রি করেও অনেক টাকা আয় করেন।
শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান শেখ জানান, শিবনাথপুর গ্রামটি ফুলের চারা উৎপাদনের জন্য এলাকায় খ্যাতি পেয়েছে। ওই গ্রামে চাকরিজীবী বা অন্য ব্যবসায়ীর সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ মানুষই হতদরিদ্র। বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামের কিছু মানুষ ফুল, ফলদ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারা উৎপাদন করছেন। এতে দূর হয়েছে দারিদ্র্য।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শিবনাথপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই ফুলগাছের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে ওই সব নার্সারি মালিকদের বিভিন্ন সময় উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। হর্টিকালচার সেন্টারে প্রশিক্ষণের জন্য তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে চারা উৎপাদন আরো বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
এসআই