ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সীমারেখা ভুলে একই ছায়ায় দুই বাংলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
সীমারেখা ভুলে একই ছায়ায় দুই বাংলা অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীরা। ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): আন্তর্জাতিক সীমারেখা মুছে জন্ম হয়েছে অন্য এক বাংলার। বাঁধনহারা ছেলের কাছে যেন হার মেনেছে নিরাপত্তার বজ্র আটুনি। মিলেমিশে একাকার হয়েছে দুই বাংলা। বছরের পুরো সময়টা ধরে এদিনটির অপেক্ষায় থাকেন হাজারও ভাষাপ্রেমীরা।

২১শে ফেব্রুয়ারি (বুধবার) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যশোরের বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

এদিন এক ছায়াতলে হাজার জনতার ঢল।

এক মঞ্চে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীরা গেয়ে চলেছেন আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলেতি পারি…। যেন কাঁটাতারের বেড়া ছিঁড়ে ফেলার নিভৃত আর্জি। বছরের পুরো সময়টা ধরে এদিনটির অপেক্ষায় থাকেন হাজারও ভাষাপ্রেমীরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীরা।  ছবি: বাংলানিউজ

বিজিবির সদস্যরা ফুল দিচ্ছেন বিএসএফ সৈনিককে। তাদের অপলক দৃষ্টিতে শুধুই বিস্ময় আর শ্রদ্ধা। চলছে রক্তদান কর্মসূচি। যেন দুই বাংলা সত্যিই আজ এক হয়ে গেছে।

এদিনটির জন্য বহু মানুষ বছরভর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। ভিন দেশের বন্ধুতে ওই একটি দিনই কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখবার সুযোগ মেলে সাধারণ মানুষের। গানের সঙ্গে সুর মিলাচ্ছেন ভাষাপ্রেমীরা। শ্রদ্ধা জানাতে আসা নারী-পুরুষেরা, শিশুরা ফুল ছড়িয়ে দিচ্ছেন। শিশুদের গালে লাল সবুজের আঁকা পতাকা দেখে ভুল হয়ে যায় কে কোন দেশি। ঠিক যেন ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রুপ ধারণ করেছে।

ভাষার টানে বোঝা গেল ছালাম, রফিক, শফিক ও বরকতের তরতাজা রক্ত বৃথা যায়নি। ভাষার আকর্ষণ ও বাঙালির নাড়ির টান যে কতটা আত্মিক ও প্রীতিময় হতে পারে তাও বুঝিয়ে দিল একুশে ফেব্রুয়ারি। সেসঙ্গে এপার-ওপার দুই বাংলার গণমানুষের ঢল ফের প্রমাণ করে দিলো দেশ ভাগ হলেও ভাগ হয়নি ভাষার। উভয়দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি এখনো যে অটুট রয়েছে তাও বোঝা গেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীদের বক্তৃতায়।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, আজ দেশ বিভক্তি হলেও ভাষার পরিবর্তন হয়নি। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। এত ত্যাগের নজির পৃথিবীতে অন্য কারোর নেই। এজন্য বাংলা ভাষা-ভাষিরা আজ গর্বিত জাতি। চিরদিন মানুষ শ্রদ্ধাভরে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা করবেন।  বিজিবির সদস্যরা ফুল দিচ্ছেন বিএসএফ সৈনিককে।  ছবি: বাংলানিউজউপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী, বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি-৪৯) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল হক ও জেলা সহকারী পুলিশ সুপার সালাউদ্দীন শিকদার।

ভারতের পক্ষে ছিলেন- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বঁনগা লোকসভা সংসদ সদস্য মমতা ঠাকুর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাপতি রেহেনা খাতুন, লেখক শ্রীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী অনুপম রায়, আবৃত্তিকার ও অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।

দিনভর শূণ্য রেখায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব,২১শে মঞ্চে একুশের কবিতা আবৃতি, ছড়া, গীতিনাট্য, আলোচনা আর সংগীতানুষ্ঠানের আসর বসে। ভাষা শহীদদের স্মরণে দু’বাংলার মানুষের সম্প্রতি আর ভালোবাসার বাঁধনকে আরো সুদৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে সন্ধ্যায় শেষ হয় ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা।

এবারের দুই বাংলার এ যৌথ ভাষা দিবসের আয়োজক বেনাপোল ও ভারতের বনগাঁ পৌরসভা। ইভেন্ট অর্গানাইজার ‘কাঠ পেন্সিল’। অনুষ্ঠানে মিডিয়া পার্টনার ছিল অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।