চারদিকে কেবল তোরণ আর তোরণ। এ যেন তোরণেরই শহর! রঙ-বেরঙের ব্যানার এবং ফেস্টুনগুলো যেন সেসব তোরণের অলঙ্কারে রূপ নিয়েছে।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর লাল-নীল বাতিগুলো যেনো আলোর ঝর্ণাধারা বইয়ে দিচ্ছে। দিনের রঙিন সাজ আর রাতে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জাই যেনো জানান দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সেজে উঠেছে ২০৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিভাগীয় শহর। তার জনসভাকে ঘিরে নববধূর সাজে সেজেছে পুরো রাজশাহী।
কেবল রাজশাহী মহানগর এলাকাই নয়, এই সাজ-সজ্জা ছড়িয়ে গেছে উপজেলার গ্রামগুলোতেও। তাই সবখানে এখন সাজ সাজ রব। সবখানেই বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করতে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যস্ততা বেড়েছে সরকারি দফতরগুলোতেও।
প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীর জনসভায় অংশ নিতে সড়কপথে সরকারের মন্ত্রী-এমপি, কেন্দ্রীয় নেতারা ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষ রাজশাহী আসবেন। তাই সড়ক জুড়েই চলছে ঘষা-মাজার কাজ। সড়ক মোহনাগুলোতে নতুন রঙ চড়ানো হচ্ছে।
জেব্রা ক্রসিংগুলোতেও পড়েছে সাদার রঙের আঁচড়। ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়রকগুলোও সাধ্যমত সংস্কার করা হয়েছে। চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ । সড়কের দু’পাশে চলছে দেয়াল লিখন। এছাড়া জনসভা সফল করতে রাজশাহীর ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়া-মহাল্লাই দিন-রাত জোরেশোরে জনসভা সম্পর্কে মাইকিং করা হচ্ছে।
মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি সড়কেই শোভা পাচ্ছে নৌকা প্রতীক সম্বলিত বিশাল বিশাল তোরণ। জনসভাস্থল ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের আশপাশের এলাকায় তোরণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে পুরো মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে কিছু দূর পর পরই তোরণ নির্মাণ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সাঁটানো হয়েছে বিভিন্ন ব্যানার। স্ব-স্ব আসনের সংসদ সদস্য এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান এমন নতুন মুখের নেতাকর্মী এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারাও তাদের ছবি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে এসব ব্যানার লাগিয়েছেন। তাই সর্বত্রই ব্যনারে ছেয়ে গেছে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে সামনে রেখে প্রায় এক মাস থেকে এই আয়োজন চলছে। দলের নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে স্বতস্ফুর্তভাবে এসব তোরণ নির্মাণ করেছেন। তাই এর সঠিক পরিসংখ্যান বলা মুশকিল। তবে তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে জনসভায় অংশগ্রহণ করানো।
এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে লিফলেট বিতরণ কার হয়েছে। মাইকিং চলছে। উঠান বৈঠক ও ওয়ার্ড পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভাও করা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামীকালের জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেবে
এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে এসে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মোট ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৯টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত এর সংখ্যা কমবেশিও হতে পারে।
তিনি বলেন, চলতি মেয়াদে এটি প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বারের মত রাজশাহী সফর। এর আগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এক দিনের সরকারি সফরে রাজশাহী যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন রাজশাহীর সরদহে থাকা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমপানী কুচকাওয়াজে তিনি প্রধান অতিথির ভাষণ দেন।
২০১১ সালে রাজশাহীর এই ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানেই এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাত বছর পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা রাজশাহী মহানগরের ভেতরে কোনো জনসভায় যোগ দিচ্ছেন।
তবে এর আগে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারা ও ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
এসএস/এএটি