রাস্তা দখলের এ সংস্কৃতি প্রথম শুরু হয় গুলিস্তানে। আর এখন এ সংস্কৃতি ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে গোটা ঢাকায়।
রোকেয়া সরণির অবস্থা যায়যায়, প্রগতির চরম দুর্গতি! কচুক্ষেত হতে ভাষানটেক সড়কে গলা পর্যন্ত অবৈধ দখল। ফনিক্স রোডসহ অনেক রোড চলে গেছে পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের দখলে। এসব রোডে এখন কোনো যানবাহন চলতে পারে না, দেখলে মনে হবে যেন কোনো অনুমোদিত বাজার।
প্রধান সড়কের এ হাওয়া লেগেছে মহল্লার সড়কেও। আর এতে পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও রাজনীতিবিদরা একাট্টা। প্রতিদিনই দখলদারদের হাতে চলে যাচ্ছে নতুন নতুন সড়ক। মাঝেমাঝে দু’একটি লোক দেখানো অভিযান হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই আবার ফিরে আসে আগের অবস্থায়। রামপুরা সড়ক যেন এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ওয়ার্ড-১৫) মাটিকাটা বাজারের নতুন রাস্তা দখলের খবর পাওয়া যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভয়াবহ চিত্র। ফুটপাত আগেই দখল হয়ে গেছে, মূল রাস্তার দু’দিকে এখন লাইন ধরে বসেছে কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মনোহর মালামালের দোকান। রিকশা চলাও দায় হয়ে পড়েছে এ সড়কে।
জানা গেলো, এই বাজার বসিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম। মাটিকাটা ব্যবসায়ী সমিতির রিসিটের মাধ্যমে চাঁদা তোলেন তিনি। মাটিকাটা ব্যবসায়ী সমিতি উপদেষ্টা এ নেতা। রাস্তা থেকে অবৈধ দোকান তুলতে গেলে সিটি করপোরেশনের লোকজনকে তাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন খোদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেক মোল্লা।
তিনি জানান, মৌখিকভাবে বলে কাজ না হওয়ায় অবগতিনামা পাঠিয়েছিলাম, রিসিভ করেনি। পরে বাধ্য হয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলাম। সেই চিঠিও ফিরিয়ে দিয়েছেন। অথচ এলাকাবাসী ফোনের পর ফোন দিচ্ছে রাস্তাটির দখলমুক্ত করার জন্য।
কাউন্সিলর বলেন, থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে বলেন, মোবাইল কোর্টের অর্ডার নিয়ে আসলে পুলিশ ব্যাপারটা দেখবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মাটিকাটা এলাকায় ১৭২টি স্থায়ী দোকান রয়েছে। তারা এই সমিতির সদস্য। এ কথা সত্যি যে, মাটিকাটা ব্যবসায়ী সমিতির কোনো নিবন্ধন নেই। এলাকা পাহারা দেওয়ার জন্য ৫ জন গার্ড রয়েছে। সেই গার্ডদের বেতন দেওয়ার জন্য সমিতির সদস্য এবং রাস্তায় ভাসমান দোকান থেকে টাকা তোলা হয়। এখানে আমার ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের কোনো সুযোগ নেই।
সিটি করপোরেশনের লোকজনকে তাড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, এটি সত্যি নয়। কাউন্সিলর আমাকে বলেছিলেন উচ্ছেদের ব্যাপারে। আমি বলেছি তারা গরিব মানুষ, এখানে ব্যবসা করে সংসার চালায়, তাই আমি তুলে দিতে পারবো না। আপনি জনপ্রতিনিধি (কাউন্সিলর) আপনি এসে তুলে দিয়ে যান।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাজার অনেক দূরে তাই এলাকাবাসীর স্বার্থেই এখানে বাজার বসেছে। এলাকাবাসীর এতে কোনো আপত্তি নেই।
রাস্তা দখলের এই সংস্কৃতি ভাইরাসের মতো ছড়াচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করতে গেলেও নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এমনকি পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নয় এমন স্লোগানও শোনা যাচ্ছে। আবার উচ্ছেদ হলেই আন্দোলন এমন হুমকির মুখে যেন জাস্টিফাই হয়ে গেছে ফুটপাতের ব্যবসা।
রহিম মিয়া নামের একজন ব্যাংকার প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি এক সময় রাস্তাতেও দোকান বসানো জাস্টিফাই হয়ে যাবে?
নগরীতে অসহনীয় যানজটের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে ফুটপাত ও রাস্তা দখল, এমনটাই মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮
এসআই/এনএইচটি/জেডএস