ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

নাটোর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণ জয়ন্তী অর্থাৎ ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবো। আর ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাটোরের দয়ারামপুর কাদিরাবাদ সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের ষষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার কোর পুর্নমিলনী ও বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
 
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে যেন কেউ অবহেলা করতে না পারে।

আমরা নিজেদের অর্থায়নে দেশের উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। থ্রি-জির পর ফোর-জি যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।
প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছি। দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
 
বিগত নয় বছরে আর্থ-সামাজিক প্রতিটি খাতে আমরা যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মানুষ এখন উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছি। দেশে বর্তমানে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার সাত দশমিক ২৮ শতাংশ। দারিদ্র্যতার হার ২০০৫ সালের ৪১ শতাংশ থেকে কমে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ৬১০ ডলার হয়েছে। একই সময়ে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সের পরিমাণ তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ নয় গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা আজ মানুষের দোরগোড়ায়। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর। মেট্রোরেল, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। খুব শিগগিরই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবিল করে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি, এতে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে বসাতে চাই। এজন্য সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো অশুভ ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি যেন দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
 
সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী একাগ্রতা, কর্মদক্ষতা এবং নানাবিধ সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য সার্বজনীন আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সেনা সদস্যদের গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দুর্ঘটনায় দুর্গতদের সাহায্য ও সহযোগিতা করে সশস্ত্র বাহিনী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
 
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় প্রশংসনীয়ভাবে কাজ চালিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করেছে সেনাবাহিনী। আমরা সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে অনেক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করেছি। ২০০৯ সাল থেকে বিগত নয় বছরে আমরা সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছি, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নত, পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেন। তার আলোকে আমরা ‘আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি।
 
তিনি সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পবিত্র সংবিধান ও দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অধুনিক, উন্নত ও সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে হবে।
  
এসময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সাবেক মন্ত্রী ডা. দিপুমনি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এসএম জাহিদ হাসান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
 
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকাপ্টারে করে ঢাকা থেকে নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাস চত্বরে পৌঁছান। এসময় তাকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, কর্নেল কমান্ড্যান্ট ও কমান্ড্যান্ট ইসিএসএমইসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
 
এরপর তিনি কাদিরাবাদ সেনানিবাস্থ ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে কাদিরাবাদ সেনানিবাসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষ করে সেনা কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনীতে অংশ নিয়েছেন। সেখানে মধ্যহ্ন ভোজ শেষে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে বিকেলে দলীয় জনভায় অংশ নেবেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮
আরআর/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।