ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিসিসিতে আন্দোলন অব্যাহত, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮
বিসিসিতে আন্দোলন অব্যাহত, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বিসিসিতে আন্দোলন অব্যাহত

বরিশাল: বকেয়া বেতনের দাবিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনে (বিসিসি) অব্যাহত রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন।

গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রতিদিন কর্মবিরতি পালন করে আসছে। আর নগর ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেয়রের কক্ষের সামনে বসে স্লোগান, সমাবেশ করে যাচ্ছেন।

চলমান আন্দোলনের পঞ্চম দিনে বৃহষ্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনরতদের সঙ্গে মেয়রের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনকারীরা এতে কোনো সারা দেয়নি।

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য আমরা বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর তাদের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ বসতে চাচ্ছে, আবার কেউ চাচ্ছে না। আর না বসলে এর সমাধান কিভাবে হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না।  

মেয়র আহসান হাবিব কামাল বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেত। পাশাপাশি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও পরিশোধ করে আসছি। তারপরও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে গেছেন। এখন আলোচনায় বসতে চাইলে বসছে না। এই নগরের মানুষের সেবার বিনিময়েই কনপোরেশন আয় করে থাকে, সেটা তাদের মাথায় থাকতে হবে। আবার কি আয় হচ্ছে কি ব্যয় হচ্ছে তা তো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবই জানেন। তাই আয় বাড়াতে হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা দরকার।

তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন স্কেল বাড়লেও বাড়ছে না সিটি করপোরেশনের আয়। আয় বাড়াতে এরই মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। যারমধ্যে নগরের বহুতল নতুন ভবনগুলোর কর আদায়, ফ্লাট বাড়িগুলোর ফ্লাট অনুযায়ী হোল্ডিং নাম্বার নির্ধারন, শাখা সড়কগুলোসহ নগরের সকল দোকানপাটের সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সের আওতাভুক্ত করা।  

আবার নগরবাসীকে দুর্নীতিমুক্ত দ্রুত সেবা দিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হবে । কিছু মানুষের দুর্নীতির কারনে রকপোরেশনের কাঙ্খিত আয় এরআগে বাধাগ্রস্থ হয়েছে। তাই সেখানেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নানান অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় কর শাখার মুশফিক আহসান আজমসহ অনেককেই আমি বদলি করেছি।  

মেয়র বলেন, চলমান আন্দোলনের কারনে প্রায় ৬টির মতো নতুন প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়াসহ নগরবাসী নানান ভোগান্তিতে পড়েছে।  

এদিকে বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের নগর ভবন শাখার সম্পাদক দীপক লাল মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর এপ্রিল মাসে বকেয়া বেতনের নামে আন্দোলনে নামার পরে মেয়র জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সে বৈঠকের সিদ্বান্তগুলো বাস্তবায়নের কথা ছিলো দ্রুত কিন্তু হয়নি।  

‘বিগত বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হোক, আর কর্মকর্তা-কর্মচারদের বকেয়া বেতন দিয়ে দেওয়া হোক, তাহলে নতুন করে বৈঠকের প্রয়োজন কি? আর যদি বৈঠক করতে হয়, তবে আন্দোলনকারীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বারের বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে ডাকা হোক’।  

তিনি বলেন, দুর্নীতি আন্দোলনকারীরা করে না। যারা কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্টজন তারাই দুর্নীতি করছে। করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোতালেব সাহেবের সনদ জাল বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কয়েকমাস আগে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলো। কিন্তু সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মেয়রের যারা কাছের লোক তাদের তো বদলিও করা হয় না।  

আবার কর্তৃপক্ষ শুধু ঠিকাদারের বিলই পরিশোধ করেন, আমাদের কথা ভাবেন না। আর ভাববেনও বা কিভাবে, সিটি করপোরেশনের ৩০ ওয়ার্ডের মধ্যে হাতেগোনা ২-১ কাউন্সিলর ছাড়া সবাই তো ঠিকাদার- বলেন, শাখার সম্পাদক দীপক লাল।

আন্দোলনকারীরা জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশনের যে আয় রয়েছে, তা দিয়ে ভালোভাবেই সব স্টাফদের প্রতিনিয়িত বেতন দেওয়া সম্ভব। কিন্তু বর্তমান মেয়র ক্ষমতায় বসার পর প্রায় ৩শ জনকে নানানভাবে নিয়োগ দিয়েছেন, যারা এখন বাড়তি বোঝা।  

তারা আরও জানান, ৬ মাস ধরে ৫ শতাধিক নিয়মিতো কর্মকর্তা-কর্মাচারী এবং চার মাস ধরে প্রায় এক হাজার ৪শ দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ২২টির মতো প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকায় আটকে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
এমএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।