এসব জনগোষ্ঠির স্ব-স্ব ভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে। এসব জনগোষ্ঠির বসবাসের কারণে পার্বত্যঞ্চল এক বৈচিত্র্যময় এলাকা হিসেবে আলাদা স্বীকৃতি পেয়েছে।
সরেজমিনে গেলা দেখা যায়, দুর্গম এলাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির শিশুরা এখনো নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলে। তাই এসব গোষ্ঠির শিশুরা বাংলা বলতে না পাড়ায় স্কুল থেকে অকালে ঝরে পড়ছে।
এই শিশুদের কথা চিন্তা করে সরকার ২০১৬ সাল থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির চারটি ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিগুলোর নিজস্ব ভাষা প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা ভাষা-ভাষী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিশুদের মাঝে দু’বছর ধরে বই বিতরণ করছে সরকার।
তবে অন্যান্য গোষ্ঠির তেমন কোনো বর্ণ পরিচয় আবিষ্কার করার অভাবে পাঠ্য বই প্রকাশ করতে পারেনি সরকার। এর মধ্যে তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার বর্ণ নিয়ে একটি গবেষণা বেশ কিছুদূর অগ্রসর হলেও তা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মাঝপথেই থমকে আছে। তাই পাহাড়ের এই বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতেই উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এসব জাতিগোষ্ঠির মানুষজন।
এদিকে ২০১৫ সালে বেসরকারি উদ্যোগে শান্তি চাকমার নেতৃত্বে রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে চাকমা ভাষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সেন্টার।
এ বিষয়ে শান্তি চাকমা বলেন, বিলুপ্ত হতে যাওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষাগুলোর মধ্যে চাকমা ভাষাটি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছি। আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে এই ভাষা ছড়িয়ে দিতে এই গবেষণাধর্মী প্রশিক্ষণ সেন্টারটি চালু করেছি। বিগত সময় থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজার শিক্ষিত যুবককে চাকমা ভাষায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
জেলায় গত বছর থেকে সরকার কর্তৃক বিতরণ করা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাতৃভাষার বইগুলো শিক্ষকের অভাবে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষাশিক্ষক সংকট দূর করতে তার এ প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান।
তিনি যোগ করে বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা সংস্কৃতির বিলুপ্তি রোধ করার জন্য সরকার যথাযথ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করলে এসব জনগোষ্ঠির ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা যাবে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র তিনটি নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের মাঝে সরকার বই বিতরণ করেছে।
তিনি বলেন, জেলায় ৬১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ভাষায় পাঠদান করতে চাকমা-মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৩৬৫ জনকে বাছাই করা হয়েছে। বাছাইকৃত এই ব্যক্তিদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে আপাতত একজন করে প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে এই ৩৬৫জন ছাড়াও আরো ২৫০ জনকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ।
চেয়ারম্যান বলেন, পাহাড়ে অনেক ভাষারই নিজস্ব অক্ষর (হরফ) সংস্কৃতি লিপিবদ্ধ নেই। সেগুলো তৃণমূল পর্যায় থেকে বের করে আনতে দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সরকারিভাবে গবেষণার ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা তা জেলা পরিষদ খতিয়ে দেখছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮
এমইউবি / জেএম