সম্প্রতি জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওথেরাপি রেজিস্ট্রেশন রুমের (রুম নং ১৫৩) সামনে এক ব্যক্তির বিতরণ করা লিফলেটে চোখ আটকে যায়। ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসাধীন সময়ে প্রতিদিন মাত্র দু’শ’ টাকায় রাজধানীতে থাকা-খাওয়া ও হাসপাতালে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে!
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, দিগন্ত মেমোরিয়াল ক্যান্সার ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০০৩ সাল থেকে ক্যান্সার রোগীদের আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে আসছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আদাবরে অবস্থিত দিগন্ত মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনে গিয়ে জানা যায় প্রফেসর ডা. নওফেল ইসলাম ২০০৩ সালে এ ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার ছেলের নাম ছিলো দিগন্ত। সে ছয় বছর বয়সে বোনম্যারো ক্যান্সারে সিঙ্গাপুরে মারা যায়। এরপর ডা. নওফেল ইসলাম ক্যান্সার রোগীদের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। দিগন্তের নামে নামকরণ করা হয় দিগন্ত ক্যান্সার মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।
শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটিতে সেবা নিতে গেলে কোনো অর্থ দিতে হয় না। তবে শিশুদের সঙ্গে অভিভাবক থাকলে সেক্ষেত্রে দিনে দু’শ’ টাকা করে নেওয়া হয়। শুরুতে ২০ জন শিশু রাখার ধারণ ক্ষমতা ছিলো এ হাসপাতালে। এখন নারী পুরুষ সবাই থাকতে পারেন। সবমিলে বর্তমানে ৩০ জন রোগীর ধারণক্ষমতা রয়েছে।
বর্তমানে ১৮ জন রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, থাকা-খাওয়া, হাসপাতালে যাওয়া-আসার জন্য দৈনিক দু’শ’ টাকা করে নেওয়া হয়। স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে রোগীদের পুষ্টিকর খাবার বলতে দুধ, ডিম, ফল খাওয়ানো হয়। যারা একেবারেই গরিব রোগী, যাদের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই, তাদেরকেও বিনামূল্যে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তাও করা হয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন রোগীদের গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমরা রোগী পাওয়ার পর দেখি তার কখন কী চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। সেই সময় হিসেবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
আমাদের এখানে থাকা অবস্থায় যদি কোনো রোগী মারা যায় আমরা তাদের দাফনের টাকা পয়সা সব দিয়ে দেই। এখানে শিশুদের খেলাধুলা ও রোগীদের বিনোদনেরও ব্যবস্থা আছে।
গ্রামের অনেক মানুষই জানেন না তারা ঢাকায় এসে কোথায় থাকবেন, কী করবেন। তাদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান অনেকটা সুখবর বলে মনে করেন তিনি।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ফাউন্ডেশনে অবস্থান করে মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন বাগেরহাটের সাইফুল ইসলাম (৪২)। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে আর্থিকভাবে আর কুলকিনারা করতে পারছিলেন না। এই ফাউন্ডেশনের খোঁজ পেয়ে এখানে থেকে চিকিৎসা শুরু করেন তিনি।
সাইফুল বলেন, এখানে আসার পর শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাই নয়; অন্যান্য সুবিধাও পাচ্ছি। ফাউন্ডেশন থেকে নিজস্ব গাড়িতে করে নিয়ে যায়, হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজ শেষে আবার নিয়ে আসে। আমার দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। এখান থেকে আমাকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করছে।
এই ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপক ইলিয়াস বলেন, ফাউন্ডেশনের সরকারি বা বেসরকারি কোনো ফান্ড নেই। কয়েকজন চিকিৎসক আর ব্যবসায়ীর দেওয়া সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি চলে। এখন ৫৩ জন সদস্য রয়েছেন, তারা সহযোগিতা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
পিএম/জেডএস