ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বোচাগঞ্জে এক পরিবারের পাঁচ জনই প্রতিবন্ধী!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
বোচাগঞ্জে এক পরিবারের পাঁচ জনই প্রতিবন্ধী! মা-বাবার সঙ্গে প্রতিবন্ধী পাঁচ ভাই

দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর আটগাঁও ইউনিয়নের লোহাগাঁও গ্রামের মোজাম্মেল হক ওরফে বুধু। মোজাম্মেলের স্ত্রীসহ ৬ ছেলে নিয়ে ৮ সদস্যের পরিবার।

এ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মোজাম্মেল পাঁচ প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। দরিদ্র মোজাম্মেল স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে ২শ টাকায় দিন হাজিরায় কাজ করেন।

উপার্জনের এ টাকা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চালিয়ে নেনে তিনি।  

১৯৯৬ সালে মোজাম্মেল হক বিয়ে করেন পাশবর্তী কাহারোল উপজেলার বলরামপুর গ্রামের আবেদ আলীর মেয়ে বিউটি আরা খাতুনকে। বিয়ের পর ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। বিয়ের বছর প্রথম ছেলে বিপ্লব (১৯) জন্ম নেওয়। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে রাসেলের (১৬) জন্ম হয়। রাসেলের জন্মের পর বোঝা যায় বিপ্লব শারীরিক প্রতিবন্ধী। এরপর তৃতীয় ছেলে রিয়াদ (১৪) জন্ম নেয়। তার কিছুদিন পর দেখাযায় দ্বিতীয় ছেলে রাসেলও শারীরিক প্রতিবন্ধী। এরপর পর্যায়ক্রমে রাজু (১০), রিশাত (৮) ও জীবন (৪) নামে আরও তিন ছেলে মোজাম্মেলের পরিবারে যোগ হয়। শুধুমাত্র রিয়াদ ছাড়া বাকিরা শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে সংসার পরিচালনা করা মোজাম্মেলের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চায়ের দোকানে দিন মজুরের কাজ করে প্রতিবন্ধী সন্তানদের বড় করে তুলছে হতদরিদ্র এ বাবা। ৬ ছেলের মধ্যে পাঁচ জন প্রতিবন্ধী। ওই পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলের সঙ্গে সমবয়সি বন্ধুরাও মেলামেশা করে না। সব সময় তাদের বাড়িতেই কাটাতে হয়। তারা নিজেরাই নিজেদের খেলার সঙ্গী।  

দরিদ্র মোজাম্মেল বাংলানিউজকে বলেন, সন্তানরা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিলেও তাদের সবাইকে সমান আদর-ভালোবাসা দেন তিনি। পাঁচ সন্তানকে স্থানীয় মাধবপুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। তাদের মা নিজেই ইজিবাইকে (ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা) করে পাঁচ ভাইকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ছেলেরা স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাও করছে।

ভবিষতে যেন তার সমাজের বোঝা না হয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বি হয়ে চলতে পারে সেদিকে নজর রাখছেন বাবা মোজাম্মেল। তারা যেন প্রমাণ করতে পারে প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়।

বর্তমানে তার পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলের মধ্যে দু’জন ভাতা পাচ্ছে। আগামীতে বাকি তিন সন্তানও ভাতা পাবে বলে আশা করছে হতদরিদ্র বাবা মোজাম্মেল হক।

উপজেলা সমাজ সেবা অধিদফতর ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে রাসেলকে মাসিক ৫শ টাকা ও ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে বিপ্লবকে মাসিক ৬শ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে আসছে। ভাতা পেয়ে মোজাম্মেলের পরিবারে কিছুটা প্রশান্তি এসেছে।

বোচাগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আহসান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, একটি পরিবারে পাঁচ সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ার বিষয়টি পুরো ব্যতিক্রম। এ পরিবারের দু’জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।  

খুব দ্রুত বাকিদের ভাতার আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।