গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পৌর এলাকার হাতিরবাগান মাঠের বালুর মধ্যে একটি শিশুর জন্ম দেয় মানসিক ভারসাম্যহীন এই সালমা। যাকে গত ৭/৮ মাস ধরেই শিবচরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করেই নারীর চিৎকার ও সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর কান্নার শব্দে কয়েকজন যুবক অন্ধকার লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান প্রসব দেখতে পেয়ে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়ে।
এসময় স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে হাসপাতালেই ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে সালমা ও শিশুটি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্যান্য নারী রোগীরা জানান, সালমাকে দেখলে এখন পাগল মনে হয় না। সন্তানের প্রতি প্রবল মাতৃত্ববোধ বোঝা যায়। সন্তান কোলে করে বসে থাকে। আদর করে। আবার মাঝে মধ্যে নিরবে কাঁদতেও দেখা যায়।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অনেকেই হাসপাতালে দেখতে আসছেন শিশুটিকে। প্রয়োজনীয় খাবারও দিচ্ছেন কেউ কেউ।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আবু জাফর জানান, নবজাতক ও মাকে ডাক্তার ও নার্সদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ আছে। তবে মা ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
শিবচর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আক্তার জানান, আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছি। সন্তানটিকে ঘিরে সালমার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে তাকালে তাকে এখন সুস্থ বলেই মনে হয়। তারপরও শিশুটির সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য দত্তক প্রয়োজন।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান আহমেদ বলেন, পিতৃপরিচয়হীন শিশুর দায়িত্ব সরকার নেবে। বর্তমানে তাদের চিকিৎসার জন্য শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে জান্নাতুল হাবিব হুমায়রা। অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে সন্তান জন্মের পর বালুর মাঠে পরে থাকা মা ও শিশুকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন চার যুবক জাহিদ হাসান, সাগর, ইব্রাহিম ও আজিজ। তারাই শিশুটির নাম রেখেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ জানান, মানুষের প্রতি মমত্ববোধই মনুষ্যত্ব। আমরা আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ি দৃশ্যটি দেখে। বালুর মধ্যে এক পাগলির সদ্য ভূমিষ্ট নাড়ি না ছেড়া সন্তান নিয়ে বাঁচার আকুতি, সন্তানকে বাঁচানোর আকুতিতে আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই। সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভেসে উঠে।
এদিকে শিবচর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, মাঝারি মাত্রার মানসিক প্রতিবন্ধী সালমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর গ্রামের নবী হোসেন মুন্সীর মেয়ে। শিশুটির জন্য রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে নানা উপকরণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ