আটকের পর রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় র্যাব-৫ এর সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আটকদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ সময় র্যাবের পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবি সদস্যরা স্বীকার করেছে, তারা সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবি সদস্য শরীফুল জানিয়েছে, ২০০২ সালে স্থানীয় রানা নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করেন তিনি। যোগদানের পর নিয়মিত দলের মিটিং ও দেশে ইসলামী শাসন কায়েমের ব্যাপারে আলোচনা করতেন। পর্যায়ক্রমে সংগঠনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে দায়িত্বশীলদের কাছে আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।
ইয়ানতের টাকা সংগ্রহ, অস্ত্র, গোলাবারুদ কেনা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের টার্গেট করে তথ্য সংগ্রহ করে প্রথমে রানা (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে) ও পরে জিয়া নামের আঞ্চলিক কমান্ডারকে হস্তান্তর করতো। বিভিন্ন সময় রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটানোর উদ্দেশ্যে গোপনে অবস্থান করছিলো।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে অপর জেএমবি সদস্য জাক্কার জানায়, সে পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। স্থানীয় রবিউল, জিয়া ও বহিরাগত আউয়ালের সংস্পর্শে জেএমবিতে যোগ দেন। দলীয় মিটিংয়ে অংশগ্রহণ, ইয়ানতের টাকা আদায়, জিহাদী দাওয়াত ইত্যাদি কাজে অংশ নেন। রবিউলের নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাকলা স্কুল মাঠে শারীরিক প্রশিক্ষণ ও বোমা তৈরির পদ্ধতি এবং ব্যবহার সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা তৈরি ও এর ব্যবহার সম্পর্কে অন্য সদস্যদের শিক্ষা দেন। এছাড়া আটক আহসান জানায়, সেও ইয়ানতের টাকা আদায়সহ সংগঠনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সর্ম্পকিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন। তারা গোপনে জেএমবির কার্যক্রম চালাতে নিজ এলাকা থেকে আত্মগোপন করেন।
র্যাব-৫ এর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মাহাবুব আলম বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর তানোরের বিলশহর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময় আরও অনেক জেএমবি সদস্য পালিয়ে যায়। আটকদের কাছ থেকে জানা যায়, নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যে জেএমবি সদস্যরা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংগঠিত হচ্ছে।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। পরে নাশকতার পরিকল্পনা ও তা বাস্তাবায়নের উদ্দেশ্যে জেএমবি সদস্যরা জামিরা এলাকায় জড়ো হচ্ছে-এ সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে ওই এলাকার বদি ডাক্তারের ডালের মিল ও আশপাশের এলাকায় ঘেরাও করে র্যাব-৫ এর সদস্যরা। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পাঁচ থেকে ছয়জন সদস্য পালিয়ে যায়। তবে জেএমবির তিনজন সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ৮ রাউন্ড গুলি, আধা কেজি গান পাউডার, ৪টি হাত বোমা, একটি আইইডি, ২টি জিহাদী বই ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের সদর দফতরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এর আগে শনিবার (২৪ ফেব্রিুয়ারি) গভীর রাতে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা থেকে তিন জেএমবি সদস্যকে আটক করে র্যাব-৫। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার জামিরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পিস্তল, বোমা, গানপাউডার, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়।
আটক জেএমবি সদস্যরা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে শরীফুল ইসলাম শরিফ (৪৫), শিবগঞ্জের চাকলা গ্রামের মৃত জহুর আলীর ছেলে জাকারিয়া হোসেন ওরফে জাক্কার (৪৩) ও একই গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে আতাউর রহমান ওরফে আহসান হাজী (৩৫)।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
এসএস/ওএইচ/