ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিএনপি নেতার জামিনের সুপারিশ আ’লীগ এমপির

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮
বিএনপি নেতার জামিনের সুপারিশ আ’লীগ এমপির

ঠাকুরগাঁও: রফিকুল ইসলাম নামে এক বিএনপি নেতার জামিনের জন্য আদালতে সুপারিশ করেছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের এমপি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দবিরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ‘প্যাডে’ স্বাক্ষর করে তিনি এ সুপারিশ করেছেন।  

রফিকুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আমগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

এছাড়া তিনি হরিপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য। তার বাড়ি আমগাঁও ইউনিয়নের ভেটনা গ্রামে।  

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শেখর কুমার রায় বলেন, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি আসামি রফিকুল ইসলামের পক্ষে জামিন চেয়ে তার আইনজীবী ঠাকুরগাঁও জেলা দায়রা ও জজ আদালতে এমপি দবিরুল ইসলামের একটি সুপারিশপত্র দাখিল করেন।  

সুপারিশপত্রে বলা হয়, রফিকুল ইসলামকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি বর্তমানে ২ নম্বর আমগাঁও ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। আমার জানা মতে, তিনি কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নহে।

ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আছাদুজ্জামান সুপারশিপত্রটি সঠিক আছে কি না তা খোঁজ খবর নিতে নির্দেশ দেন বলে জানান আইনজীবী শেখর কুমার রায়।  

ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামসহ চার আসামি বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে রয়েছেন।  

আইনজীবী শেখর কুমার রায় আরো বলেন, এমপি দবিরুল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। যে ধারায় মামলা হয়েছে সেটার সাজা মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।  

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হরিপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ভুষণ চন্দ্র বর্মন বলেন, চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিএনপি নেতা ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের বাড়িতে ৩০-৩৫ জন ‘অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড’ চালানোর উদ্দেশে গোপন বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে সকাল ৭টার দিকে হরিপুর থানার এসআই রেজাউল আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় আটক হন বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম, আক্তারুজ্জামান ওরফে ডাবলু, শফিকুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম। এসময় ওই বাড়ি থেকে লোহার রড, হাতুরি, পেট্রোল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা নাশকতার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেন। হরিপুর উপজেলার বিভিন্ন যানবাহন, কামারপুকুর এলাকার নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটনের পরিকল্পনা ছিল তাদের। তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতো।  

ওইদিনই তাদের বিরুদ্ধে হরিপুর থানার এসআই রেজাউল আলম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ১৫ (১) (ক) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।  

এসআই ভুষণ বলেন, মামলাটি আমরা তদন্ত করছি, সেই সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।  

আমগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু তাহের বলেন, ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম আমার কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি হরিপুর উপজেলা বিএনপির ৯৫ নম্বর সদস্য। আমি শুনেছি, পুলিশ তাকে নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।  

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি দবিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত নন। এজন্য সুপারিশ করেছি। পুলিশ যদি এখন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দেয় তাহলে তো কিছুই করার নেই।  

রফিকুল ইসলাম বিএনপি নেতা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রফিকুল জাতীয় পার্টি করেন, বিএনপি করেন না। আর জাতীয় পার্টির লোকজন আমাদের পক্ষের মহাজোটে কাজ করেন।  

এর আগে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর দবিরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা সদর উপজেলা জামায়াতের আমির শামসুজ্জামান দুলালকে সন্ত্রাস বিরোধী মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার বরাবর সুপারিশ করেছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।