মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজশাহীর সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক সমঝোতা সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহাবুবর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
তবে উপস্থিত ছিলেন না শিক্ষক এটিএম এনামুল জহির। তার পক্ষে রাবির উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ও উপ উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন। সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও উপস্থিত ছিলেন।
আপোস প্রশ্নে ডাবলু সরকার সাংবাদিকদের জানান, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সমঝোতা সভা চলে। এতে সংঘটিত ঘটনাটি নিয়ে উভয়পক্ষে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে আপোসের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ মার্চ দু’পক্ষের মামলার শুনানির দিন নিজেদের মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে দিন নির্ধারণ করেন। পরে সন্তোষজনক এ সমঝোতা সভা শেষ করা হয়।
এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাবি শিক্ষক এনামুল জহির তার মেয়েকে দেখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক মেরি প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে।
এতে ওই নারী চিকিৎসক তাকে গালাগালি শুরু করলে এনামুল জহির তাকে ‘ননসেন্স’ বলে মন্তব্য করেন। পরে প্রিয়াঙ্কা ফোনে বিষয়টি আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক মির্জা কামাল হোসাইনকে জানায়। পরে কামালসহ বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তাকে বেধড়ক মারধর করে। পরে ঘটনাটি জানতে পেরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
ঘটনার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে মারধরে জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাস্তির দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে এলে পরদিন রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কুদরত-ই-খোদা তার আদালতে স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। এছাড়া রাজশাহীর একজন আইনজীবীও বাদী হয়ে রামেকের ৮ ইন্টার্ন চিকিৎসের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর এবং তাকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলার অভিযোগে হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাবি শিক্ষক এনামুল জহিরের বিরুদ্ধেও আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১ মার্চ সবগুলো মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
এ অবস্থায় মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষক এনামুল জহিরের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ করে বিক্ষোভও করেন ইন্টার্নরা।
এতে জরুরি চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ সময় তারা বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এর পরই সন্ধ্যায় এ সভা ডাকা হয়।
সভায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক ডা. নওশাদ আলী, রামেকের অধ্যক্ষ আনোয়ার হাবীব, মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোসাব্বির হোসেন, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সভাপতি লোকমান আলী, সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক, রামেক ইন্টার্ন পরিষদের সভাপতি মীর্জা কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সভার পর রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, শিক্ষক এনামুল জহির এখন ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
যেসব ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তার অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছিলো, তারা ঢাকায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান করে নেবেন।
তবে উভয়পক্ষের মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হলেও আদালতের স্বপ্রণোদিত হয়ে দায়ের করা একটি পিটিশন মামলা রয়েই যাবে। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, পুলিশ শিক্ষক এনামুল জহিরের কাছ থেকে লিখিতভাবে অনাপত্তি গ্রহণ করবে। এরপর সেটি আদালতে দাখিল করা হবে। তখন ওই মামলাটিরও নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮
এসএস/ওএইচ/