ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশে থাকবে না মিটারগেজ রেললাইন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
দেশে থাকবে না মিটারগেজ রেললাইন

ঢাকা: সড়কপথে যানজট বিবেচনায় এবং রেলপথে নানা সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় ট্রেন ভ্রমণে ঝুঁকছেন যাত্রীরা। সেজন্য ট্রেনে যাত্রীসেবা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগও বাস্তবায়ন করছে সরকার। এতে ট্রেনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে, বাড়ছে যাত্রীর চাপও। কিন্তু দেশের মিটারগেজ লাইনে অধিকসংখ্যক রেলকোচ চালানো যায় না বিধায় যাত্রীর চাপ সামলানো দিনে দিনে মুশকিল হয়ে পড়ছে। সেজন্য অধিকসংখ্যক রেলকোচ চালানোর সুবিধার্থে দেশের মিটারগেজ লাইনগুলো ধীরে ধীরে ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজে পরিণত করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।

এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পটি ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হবে, এরমধ্যে ভারতের ঋণ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার। এরমধ্যে ব্রডগেজ ৬৬০ দশমিক ২২ কিলোমিটার, ডুয়েলগেজ ৩৬৫ কিলোমিটার এবং মিটারগেজ রেলপথ ১ হাজার ৮৫৪ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। মঙ্গলবার অনুমোদিত এ প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর এবং রংপুর জেলা সদর, বদরগঞ্জ ও কাউনিয়া উপজেলায় মিলিয়ে মোট ৬৬ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার মিটারগেজকে ডুয়েলগেজ করে ফেলা হবে। এরমধ্যে ডুয়েলগেজের মেইন লাইন হবে ৫৭ কিলোমিটার এবং লুপলাইন হবে ৯ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার।  

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, দেশে আর মিটারগেজ থাকবে না। অধিক রেলকোচ চালানোর জন্য সব রেললাইনই ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজ হয়ে যাবে। এটা পর্যায়ক্রমে হবে। প্রাথমিকভাবে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের পরিবহন ব্যয় কমাতে হলে রেলপথের বিকল্প নেই। আমরা যদি রেলপথে অধিক পরিমাণে কোচ ব্যবহার করতে পারি, তবে যাত্রী পরিবহনের চাপ কমে যাবে। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে। কৃষকেরা ফসলের সঠিক দাম পাবেন। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
 
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের আওতায় ৩৪৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৫২ মিটার ব্রিজ ওয়ার্কস, ৯৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সিগনালিং ওয়ার্কস ও ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে অফিস ইক্যুইপমেন্ট কেনা হবে। ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হবে ট্যাম্পিং মেশিন ও পিওয়ে ইক্যুইপমেন্ট কেনা হবে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ১৪ জন আন্তর্জাতিক পরামর্শকের মূল বেতন বাবদ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্পে লজিস্টিকস সাপোর্ট বাবদ ব্যয় হবে সাড়ে ১০ কোটি টাকা।

পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রূপান্তর প্রকল্পসহ একনেক সভায় মোট ১৫টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এই প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা।  

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজবাড়ীর কালুখালী থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মাণে সংশোধিত আকারে অনুমোদিত প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান ও সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারিত ছিলো ১ হাজার ১০১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সে সময় গৃহীত প্রকল্প অনুযায়ী ২০১৩ সালের জুনে এটির কাজ শেষের কথা ছিলো। ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

কর্মকর্তারা বলছেন, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর রেলপথে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব রেল যোগাযোগ সেবায় আরও আগ্রহী হবেন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।