তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় ঠাণ্ডাজনিত কারণে পানের বাজারে ধস নেমেছে। পানে মড়ক ধরায় ফলন কমেছে, বেড়েছে দাম।
রাজশাহীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম বাড়ায় খিলি পানের দোকানদাররাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাধারণ ৪/৫ টাকার খিলি পান এখন ৬/৭ টাকায় বিক্রি করছেন। ঢাকায় আবার এটাই হয়ে গেছে ১০-১২ টাকা।
মহানগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার পান দোকানদার সবুর মিয়া বলেন, পানের বাজারে আগুন লেগেছে। বরজে পচন ধরায় ফলন কমে গেছে। পান ভাঙার পর বাছাই করে যা পাওয়া যাচ্ছে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন চাষি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব এসে পড়েছে খুচরা পানের বাজারে।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে। বরজ থেকে ভেঙে গোছানোর পরে পানের উপর কালো দাগ ও পচন রোগ দেখা যাচ্ছে। আর এতেই ভাগ্য টলে গেছে চাষিদের। তাই পানের দাম চড়েছে বলেও জানান এই খুচরা ব্যবসায়ী।
রাজশাহীর সুস্বাদু মিষ্টি পানের কদর রয়েছে দেশজুড়েই। তাই রাজশাহীর পানের চাহিদা সব সময়ই বেশি। কিন্তু ঠাণ্ডা-খরা সহিষ্ণু নতুন জাত উদ্ভাবন না হওয়ায় প্রতিবছরই আবহাওয়াজনিত কারণে গাছসহ পানে নানা রোগের আক্রমণ হচ্ছে। এবার প্রবণতা বেশি। তাই লোকসানের ধকল কাটাতে পারছেন না এই অঞ্চলের পান চাষি ও ব্যবসায়ীরা। কাণ্ড পচা ও পাতা মরা রোগে চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। কম ফলনে দাম বাড়লেও এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না তারা।
পানের জন্য বিথ্যাত রাজশাহীর মোহনপুর হাটে (পাইকারি) গিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে অন্তত এমন চিত্রই পাওয়া যায়। এখান থেকেই বেশি দামে বিভিন্ন মোকামে পান চলে যায়।
মোহনপুরের বাকশিমইল গ্রামের পান চাষি আফাজ উদ্দিন বলেন, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে পানের দাম নিয়ে বাজারে এই অস্থিরতা বিরাজ করছে। বর্তমানে হাটে প্রকারভেদে এক পোয়া (৩২ বিড়াই এক পোয়া এবং ৬৪ পানে এক বিড়া) বড় পানের দাম ৮শ টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার টাকায় উঠেছে।
আর মাঝারি পান প্রতি পোয়া ৫শ টাকা থেকে বেড়ে ১৬শ থেকে দুই হাজার টাকায় উঠেছে। এছাড়া ছোট আকৃতির পান পোয়া প্রতি ৩শ টাকা থেকে বেড়ে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
একই উপজেলার মৌগাছি গ্রামের বড় ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, গত রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ১১ লাখ টাকার পান কিনেছিলেন তিনি। মৌগাছি হাট থেকে সেদিনই তিনি বগুড়া, রংপুর ও নীলফামারীসহ ঢাকা এবং খুলনার বিভিন্ন মোকামে সেই পান সরবরাহ করেন। কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি পান পথেই পচে নষ্ট হয়ে যায়। পরে বাছাই করে মাত্র ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেন। টানা শৈত্যপ্রবাহে পানের উপর কালো দাগ পড়ায় এমন ক্ষতি হয়েছে।
জয়নাল হোসেন নামে আরেক পান ব্যবসায়ী জানান, হাট থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার পান কিনেছিলেন। কিন্তু নীলফামারী ও পীরগঞ্জে পাঠিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার পান বিক্রি করতে পেরেছেন। এতে তার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর যাই হোক অন্তত চলতি বছরে এই লোকসান ওঠানো তার পক্ষে সম্ভব নয়।
এভাবে ক্ষতি হওয়া পানের বেশি বাছাই হচ্ছে। এতে কম ফলনের পানের দাম আরও বেশি বেড়ে যাচ্ছে। দাম বাড়ার অনেক কারণের পেছনে এটিও একটি অন্যতম কারণ, বলেন এই ব্যবসায়ী।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট- এই ছয়টি উপজেলায় এবার ২ হাজার ১৯৬ হেক্টর (১৬ হাজার ৩৪০ বিঘা) জমিতে পানের আবাদ রয়েছে। যার মধ্যে পবা উপজেলায় ১০৫ হেক্টর, মোহনপুর উপজেলায় ৮৯০ হেক্টর, বাগমারা উপজেলায় ৬৬০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৭০ হেক্টর এবং দুর্গাপুরে ৪৭০ হেক্টর।
পানের রোগ-বালাই এবং একটি গবেষণাগার স্থাপন প্রশ্নে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালী জানান, তারা কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।
রোগ-বালাই সম্পর্কে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে থাকা উপজেলা ও থানা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে চাষিরা শীতেও ভালো ফল পাবেন। আর গবেষণাগার স্থাপনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলেও জানান ঊর্ধ্বতন এই কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
এসএস/এএ