ওই চার পুলিশ সদস্য হচ্ছেন-রংপুরের পীরগাছা উপজেলার রহমতচর গ্রামের তোজাম্মেল হক, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কিশামত গোবধা গ্রামের হযরত আলী, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামের বাবলু মিয়া ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার খামার ধনারুহা গ্রামের নাজিম উদ্দিন।
হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)।
তবে এ বছরের ৪ মার্চ চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
২০১৩ সালে এই দিনে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর পরই সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয় জামায়াত-শিবির ও সাঈদী অনুসারীদের নারকীয় তাণ্ডব। সকালে থেকে উপজেলার কঞ্চিবাড়ি, বেলকা, দহবন্দ, হরিপুর, বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, রামজীবন ও ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সাঈদী অনুসারীরা। দুপুরে রায় ঘোষণার পর তারা বামনডাঙ্গা বাজার, বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন, শোভাগঞ্জ বাজার, বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও ছাইতানতলা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাংচুর করে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। উপরে ফেলে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনের রেল লাইন, অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে।
এরপর তারা বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে থাকা ওই চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে তারা। এর প্রতিবাদ করায় জিহ্বা কেটে ও চোখ উপড়ে হত্যা করা হয় গংশারহাটে এক আওয়ামী লীগ সমর্থককে।
এ ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপ-পরির্দশক (এসআই) আবু হানিফ বাদি হয়ে ৮৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুই হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ মামলাটির তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ২৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত কর্মকর্তা) মোজাম্মেল হক।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গাইবান্ধা-১ আসনের সাবেক এমপি জামায়াত নেতা আবদুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজকে। এছাড়া চার্জশিটভুক্ত উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকজন আসামি হলেন- জামায়াত নেতা আশরাফ আলী, ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী, জামায়াত কর্মী হুমায়ুন কবীর ওরফে ডিস লিটন, ইলিয়াস মিয়া ও ছামিউল ইসলাম।
গাইবান্ধা জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শফিকুল ইসলাম শফিক বাংলানিউজকে বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার কারণে মামলার বিচার কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে। তবে মামলাটি পরিচালনা করতে কোনো প্রকার সমস্যা বা গাফিলতির কারণ নেই। আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলাটি দায়রা জজ আদালতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিচারকাজ শুরুর লক্ষ্যে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গেজেট জারি করা হয়েছে। ৪ মার্চ নির্ধারিত তারিখে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। আশা করি, দ্রুত বিচার কাজ শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. আতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ৩৩৫ আসামির মধ্যে এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। বাকি ২৩৪ আসামির মধ্যে এ পর্যন্ত ২২৯ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলেও তারা বর্তমানে জামিনে আছে।
বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি ইতিহাসে বিরল। এখনও বিচার শুরু না হওয়ায় নিহত চার পুলিশ সদস্যের পরিবারে হতাশা বাড়ছে।
এদিকে, সুন্দরগঞ্জবাসী ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে প্রতি বছর এ দিনটিকে স্মরণ করে আসছে। দিনটি উপলক্ষে পুলিশ বুধবার দুপুরে বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও শোকসভার আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
এসআই