বগুড়া শহরের কেন্দ্রীয় চারমাথা বাস টার্মিনালসহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ব্যারিকেড দিয়ে এই অচলাবস্থা তৈরি করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে বগুড়ার ওপর দিয়ে বাস চলাচল বন্ধের এ কর্মসূচি পালন করছে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
দূরপাল্লার বাস ধর্মঘটের সঙ্গে নওগাঁর কোনো সম্পর্ক নেই
বগুড়ার মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, আন্দোলনরত শ্রমিকরা উত্তরের ১১ জেলা থেকে ঢাকামুখী অথবা ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী বাসগুলো জেলার শেরপুর, শাজাহানপুর, বনানী, তিনমাথা, চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় থামিয়ে দিচ্ছেন। এতে যাত্রী সাধারণের পাশাপাশি শ্রমিকরাও ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের এক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার মতো শ্রমিকরা দিনে এনে দিনে খায়। কিন্তু মালিকদের তো আর এই চিন্তা করতে হয় না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা বাস চালাবেন না। তাহলে আমার মতো শ্রমিকদের কী হবে?’
বেলা ১২টার দিকে চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দাদী জমিলনের সঙ্গে ঢাকায় যাওয়ার জন্য কাউন্টারে ঘুরছে ইমরান। তাদের বাসে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য এসেছেন ফুফু ফাতেমা। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরেও কোনো বাস মিললো না।
ইমরান জানায়, ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য সকালে বাড়ি থেকে বের হয় তারা। টার্মিনালে আসার পর দেখতে পায় সবগুলো বাসের কাউন্টার বন্ধ। দুপুর হয়ে এলেও কোনো বাস জোটেনি। তাই বাসের জন্য দাদী-নাতি মহাসড়কের পাশে বসে আছে।
শহরের ঠনঠনিয়ায় আন্তঃজেলা কোচ টার্মিনালে গিয়েও দেখা যায়, ঢাকাগামী সবগুলো পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ। ঢাকাগামী অসংখ্য যাত্রী এসে ঘুরপাক খাচ্ছেন। কিন্তু কোনো বাসের টিকিট পাচ্ছেন না। টার্মিনাল থেকে কোনো বাসও ছাড়ছে না।
গাবতলী উপজেলা থেকে আসা তহমিনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, ঢাকায় যাওয়ার জন্য তিনি তিন দিন হলো এই টার্মিনালে ঘুরছেন। কিন্তু এখনও ঢাকায় যেতে পারেননি। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি।
এই কর্মজীবী নারী আরও জানান, ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেখানেও বিফল। কারণ ট্রেনে আগামী ৫ মার্চ পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই। এতে ঢাকার কর্মস্থলে যাওয়া নিয়ে মহাবিপাকে রয়েছেন তিনি।
নওগাঁ শ্রমিক সমিতির সঙ্গে বিরোধের সূত্র ধরে গত কয়েকদিন বগুড়ার মালিকদের বাস ঢাকার মহাখালী ও গাবতলীতে আটকে রাখেন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) নওগাঁ ও বগুড়ার বিরোধ মিটে যাওয়ার পরও ঢাকায় বগুড়ার বাস মালিকদের পরিবহন কাউন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে ওই দিন রাত থেকে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন বগুড়া থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রাখেন জেলার বাস মালিকরা। কিন্তু তাতেও সমঝোতা না হওয়ায় এবং আটক ৩৪টি গাড়ি ঢাকা থেকে ছেড়ে না দেওয়ায় বুধবার সকাল থেকে ঢাকামুখী বাস চলাচল বন্ধের ডাক দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
এমবি/জিপি/এইচএ/