বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপ্তি ভাষণে এ হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে আমরা কোনোভাবে প্রশ্রয় দেবো না, দুর্নীতি করলে কোনোভাবে ছাড় দেব না।
তিনি আরো বলেন, আজকে বিএনপি নেত্রীর সাজা হয়েছে। এই মামলা করেছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে টাকা আসে কিন্তু সেই টাকা এতিমরাপায়নি। সেই টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী কারাগারে যাবেন, এটা বোধ হয় তিনি আগেই টের পেয়েছিলেন। তাই রায়ের আগেই দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে দুর্নীতিকেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করেবিএনপি। অপরাধীকেই নেতা হিসেবে মেনে নেয়। যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করলো সেও সাজাপ্রাপ্ত। যে দল দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে, দুর্নীতিবাজকে নেতা হিসেবে মেনে নেয়, সেই দল ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি ছাড়া আর কী করবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত রায় দিয়েছে, এখানে সরকারের তো কোনো হাত নেই। যে জজ রায় দিলেন তাকে এখন বিএনপি নেতারা হুমকি দিচ্ছেন। তবে কি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে বাংলাদেশ? এটা তো আমরা হতে দিতে পারি না। দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দেই না। নিজেদের লোককেই কোন ছাড় দেই না। এমনকি আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে যে কোন সময় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। আদালত থেকেও ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে যে মামলা দিয়েছে, সেই একই ধরনের মামলা আমার বিরুদ্ধেও দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সকল কাগজপত্র পরীক্ষা করেছে, এতটুকু ফাঁক পাওয়া যায় কিনা। শত চেষ্টা করেও ট্রাস্টের এতটুকু অনিয়ম তারা পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে প্রতিমাসে ১৬ থেকে ১৭শ’ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়। কিন্তু কোন অনিয়ম না পেলেও ওই সময় ট্রাস্টের একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময় অনেক শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, টাকার অভাবে গ্রেনেড হামলায় আহত অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়েরকৃত কোন মামলাই প্রত্যাহার করতে দেইনি। স্পষ্ট বলেছি প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত হোক, কোথাও এতটুকু ত্রুটি ধরা পড়লে আমি বিচারের মুখোমুখি হব। কারণ আমরা রাজনীতি করি নিজের ভাগ্য গড়তে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনযাত্রা উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করি।
সংসদ নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল ২৭ বছর আগে, কিন্তু সেই এতিমের টাকা কোথায়? তখনকার দিনে ২ কোটি টাকার অনেক মূল্য ছিল। ওই সময় দুই কোটি টাকা দিয়ে ধানমন্ডিতে ৭-৮টি ফ্ল্যাট কেনা যেত। সেই টাকার লোভ বিএনপি নেত্রী সামলাতে পারেননি। এতিমের হাতে একটি টাকাও তুলে দেননি, পুরো টাকাই মেরে খেয়েছেন। অন্যদিকে আমাদের কিছুই নেই। তবুও আমরা দু’বোন আমাদের পৈত্রিক বাড়িটিও জনগণের জন্য দান করে দিয়েছি। অথচ বিএনপি নেত্রী এতিমের দুই কোটি টাকার লোভ সামলাতে পারলো না!
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বিএনপি নেত্রীই নন, তার পুত্র তারেক রহমানের পাচারকৃত অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধরা পড়েছে। সিঙ্গাপুরে তার আরেক পুত্র কোকোর টাকা ধরা পড়েছে। বিএনপি নেত্রীর পুত্রদের অর্থপাচারের তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। আমরা ধরা পড়া সেসব টাকা দেশে ফেরত এনেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮/আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা
এসকে/এসএম/এমজেএফ