সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের কারাগারে মোট বন্দির সংখ্যা ৭৯ হাজার ৩১৫ জন। এর মধ্যে বিচারাধীন অবস্থায় কারাগারে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৬৩৪ জন, যা মোট বন্দির ৮০ দশমিক ২২ শতাংশ।
মোট বন্দিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ১ হাজার ৫৫৭ জন, বিশেষ বন্দি ৩৩ জন, শিশু বন্দি ৩ জন, ৫৪ ধারায় আটক ১৭ জন। এছাড়া, মায়ের সঙ্গে ৬ বছরের কম শিশু বন্দি রয়েছে ৩০৬ জন।
জেএমবি, যুদ্ধাপরাধীসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠনের বন্দি রয়েছেন ৭০৪ জন। এর মধ্যে জেএমবি’র ৫২৪ জন, যুদ্ধাপরাধী ১০৯ জন, হিজবুত তাহরীরের ৮ জন, হরকাতুল জিহাদের ৪০ জন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ১২ জন ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বন্দি আছেন ১১ জন। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বন্দি আছেন ৮০৩ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধার্য তারিখে কারাগার কর্তৃপক্ষ আদালতে হাজতি আসামিকে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হলে যেমন বিচার বিঘ্নিত হতে পারে, তেমনি পুলিশ সাক্ষী উপস্থিত করতে ব্যর্থ হলে বিচারে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হতে পারে। আবার আদালতের বিচারক সেই দিন ছুটিতে থাকলে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে বিচার বিলম্বিত হতে পারে। এমন ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমন্বয় জরুরি।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, একজন আসামির আজকে ঢাকার আদালতে হাজিরা দিলে কাল সিলেটে হাজিরা, পরদিন খুলনাতে। এ পরিস্থিতিতে কোনো অবস্থাতেই সঠিক সময়ে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় না। ভয়ঙ্কর, দাগী ও ঝুঁকিপূর্ণ আসামিদের কারাগারের অভ্যন্তরে রেখে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আদালতে তাদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে সাক্ষ্যগ্রহণ বা তাদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষাকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এর ফলে আদালতে সশরীরে উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে।
কারা কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, কারাগারের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ধারন ক্ষমতার চেয়ে বন্দি বেশি। ৭৯ হাজার ৩১৫ জন বন্দি থাকলেও কারাগারের ধারন ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৬১৪ জনের। এতে করে কারারের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং আদালতে নির্দেশে সম্ভাব্য কম সময়ের মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির অথবা আদালতের নির্দেশ মোতাবেক জামিন প্রাপ্ত আসামিকে যথাসময়ে মুক্তি দেওয়া উচিত। এ মূহুর্তে জামিন ও মুক্তি পাওয়ার পরেও বন্দি রয়েছেন ১ হাজার ৫৪৩ জন। পক্ষান্তরে নতুন বন্দি ১ হাজার ১৩৬ জন।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার মাধ্যমে বিচার প্রার্থী জনগণকে স্বল্প সময়ে ও সুলভে ন্যায় বিচার পৌঁছে দেওয়া বিচার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কোনো একটির একক দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না। যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলে সামগ্রিকভাবে বিচারের গতি ধীর হয়ে যায়।
এ পরিস্থিতি লাঘবে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ন্যাশনাল জাস্টিস কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এনজেসিসি) উদ্বোধন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কমিটি পলিসি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে কার্যকর সক্রিয়তার মাধ্যমে প্রচলিত আইনেই সমন্বয়ের মাধ্যমে মামলা জট কমাতে সক্ষম হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম প্লাটফর্ম রয়েছে।
এর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে বিচার প্রক্রিয়ার গতি তরান্বিত করতে যে সব ব্যবহারিক সমস্যা দেখা দেয়, সেসব সমস্যার বাস্তবভিত্তিক ও দ্রুত সমাধান করা সম্ভব বলেও মনে করেন কারা মহাপরিদর্শক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৮
পিএম/ওএইচ/