কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার কারণে রাবার ড্যাম অকেজো হয়ে পড়ায় চলতি বোরো এবং মৌসুমী শাক-সবজি চাষের প্রয়োজনীয় সেচ সুবিধা নিয়ে কৃষকদের মাঝে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
রাবার ড্যামের পানি দিয়ে বছরের এই সময়ে অধিকাংশ জমিতে বোরো আবাদে কৃষকদের ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও পানছড়ি সদর, লতিবান এবং উল্টাছড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলের চিত্র ভিন্ন।
একই চিত্র কাছের-দূরের তালতলা, বৃহত্তর শান্তিপুর, লতিবানমুখ, মানিক্যাপাড়া, সূতকর্মাপাড়া, চাইথোঅং চৌধুরী পাড়া, দক্ষিণ জাগুরনালা এবং ডেবাছড়া এলাকাতেও। বিলের পরে বিলে বানানো সেচ ড্রেনগুলোতে নেই পানির প্রবাহ। স্থানীয়রা বলেন রাবার ড্যাম সংস্কারে সময়মত পদক্ষেপ না নেয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর এলাকায় চেঙ্গী নদীর উপর ২০১৩-১৪ সালে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যামটি তৈরি করা হয়। যার নিশ্চয়তা ছিল ২৪ বছর। ড্যামটি নির্মাণের ফলে কাছে দূরের সাড়ে ৬শ’ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সহজলভ্য ছিলো।
প্রায় ১ হাজার ৩শ’ কৃষক পরিবার সরাসরি এই ড্যামের উপকারভোগী। একই সাথে মৎস্য সম্পদেরও উৎস হয়ে উঠেছিল ড্যাম এলাকা। কিন্তু ৪ বছরের মাথায় বিকল হওয়াতে কৃষকদের মাঝে নেমে এসেছে হতাশা।
স্থানীয় কৃষক জ্ঞান রঞ্জন চাকমা ও অরিন্দম চাকমা বলেন, এ বছর আমরা অনেক সমস্যায় পড়েছি। রাবার ড্যাম হওয়ায় এতদিন পানির অভাব ছিল না। ভালো মতো কৃষি কাজ করতে পেরেছি। কিন্তু এখন ড্যামটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানি সংকটে পড়েছি। এখন চাষ করতে সমস্যা হচ্ছে।
রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতিরি অর্থ সম্পাদক বিশ্ব মিত্র চাকমা বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি রাবার ড্যাম এবং এর আশপাশে বাঁধ নির্মাণের কাজ ভালো হচ্ছে না। তার উপর নির্মাণের পর থেকে কোনো রকম মেরামত হয়নি। এখন ড্যাম সচল না করা পর্যন্ত কৃষকের দুশ্চিন্তা কমবে না।
পানছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন শেখ বলেন, রাবার ড্যাম থেকে প্রায় ১৩শ’ কৃষক পরিবার সুবিধা ভোগ করে। ৬শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। যদি খুব শিগগিরই রাবার ড্যামটি ঠিক করা না হয় তাহলে মার্চ মাসের খড়ার কারণে হুমকির মুখে পড়ব।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চু মণি চাকমা বলেন, ইতিমধ্যে বিষষয়টি এলজিইডি কর্তৃপক্ষের নজড়ে আনা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করার জন্য বলা হয়েছে।
তবে পানছড়ি এলজিইডি সহকারী প্রকৌশরী মেসবাহুল কবির বলেন, ড্যামের রাবার দেশে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ইতিমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। রাবার পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা সংস্কার কাজ শুরু করে দেব।
রাবার ড্যামের কারণে গত কয়েক বছরে এই এলাকার কৃষি ও মৌসুমী শাক-সবজি উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে রাবার ড্যামটির বেহাল অবস্থার কারণে শঙ্কিত কৃষকরা। ড্যামটি মেরামতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রত পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৮
এমজেএফ