শুক্রবার (০২ মার্চ) বিকেল তিনটা থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে দু’পক্ষের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত ভালো কিছু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শূন্যরেখা ক্রস করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর যদি ঘটে তাহলে আমরা তা প্রতিহত করবো। তাদের সীমানার ভেতরে কী করবে সেটা তাদের বিষয়।
লে. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, তুমব্রু সীমান্তের নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছিল বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। একই কারণে তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলি চালিয়েছিল বলেও দাবি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির আগে বাংলাদেশকে অবহিত করা হবে বলে কথা দিয়েছে মিয়ানমার।
‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে করা হয়নি, আমাদের নিরাপত্তার জন্যই আমরা এটা করেছি। ’
মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, ‘তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের যে কোনও সময় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ। ’
তিনি জানান, সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারাও ভালো আছে।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন মঞ্জুরুল আহসান খান ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দেশটির সীমান্ত পুলিশের লে. সোয়োজাই লিউ।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই তাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে বলে বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) ভোর থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি বার বার মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পতাকা বৈঠকের জন্য আহ্বান করছিল। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিজিপি জানিয়েছে, সেদেশের সীমান্তরক্ষীরা বিকেল ৩টায় বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন।
বিজিবি ও সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাতটি ট্রাকে করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুমব্রু সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। সীমান্তের কাঁটাতার বেড়া বরাবর ব্যাংকারগুলোতেও অবস্থান নিয়েছে তারা। তাদের সঙ্গে বিজিপির সদস্যরাও পাহারা দিচ্ছে।
জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ জানান, সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মর্টারসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। তাই সকাল থেকে ১১ বার মাইকিং করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তারা জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। এরপর বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার ভোর রাতে দু’দফা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে বিজিপি।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তুমব্রু সীমান্তে হঠাৎ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো শুরু করে। অস্ত্র নিয়ে সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়ার কাছে অবস্থান নেয় তারা। ভারী অস্ত্রের পাশাপাশি হালকা অস্ত্রও তাক করেছ দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৮
এসএইচ