ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আল-আমিনের স্বপ্ন পূরণ করলেন জেলা প্রশাসক 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
আল-আমিনের স্বপ্ন পূরণ করলেন জেলা প্রশাসক  আল-আমিনের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা তুলে দিচ্ছেন জেলা প্রসাশক। ছবি: বাংলানিউজ

মাগুরা: হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আল আমিন। অভাব অনটনকে জয় করে এসএসসির পর এইচএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মেধাবী আল-আমিন এ বছর ঢাবি, জাবি, কুয়েটসহ দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। 

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-তো দূরের কথা সহায় সম্বলহীন তার অসুস্থ কর্মহীন বাবা’র পক্ষে বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তি হতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি ভাড়ার টাকার যোগান দেওয়াও সম্ভব নয়।
 
কলেজ শিক্ষক আবু সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আল-আমিন অনেক দিন না খেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

গাড়ি ভাড়ার টাকা না থাকায় সদরের সিরিজদিয়া থেকে হেঁটে মাগুরায় এসে পরীক্ষা দিয়েছে। এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করলেও সে কখনো চামড়ার এক জোড়া স্যান্ডেল বা জুতাও পায়ে দিতে পারেনি।  

তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আল আমিনের প্রায় ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু তার দরিদ্র অসহায় বাবার পক্ষে এক হাজার টাকা জোগাড় করে দেওয়ারও সার্মথ্য নেই। দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে মেধাবী আল আমিনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দিন ১৫ আগে আমি বিষয়টি নবাগত জেলা প্রশাসক আলী আকবর মহোদয়কে অবগত করি। জেলা প্রশাসক মহোদয় তাৎক্ষণিকভাবে আল-আমিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সহায়তার আশ্বাস দেন।  

পরদিন তিনি আল-আমিনকে ডেকে নিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও আল আমিন কুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।  

অবশেষে বৃহস্পতিবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক নিজে আল আমিনকে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন এবং কুয়েটে ভর্তি ও হোস্টেলে থাকার জন্য ২৪ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেন।  

এর মধ্যে তিনি দিয়েছেন ২০ হাজার টাকা ও সদর উপেজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান দিয়েছেন ৪ হাজার টাকা।  

এছাড়া তিনি তার জন্য নতুন শার্ট, প্যান্ট, জুতা, ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিষপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।  

আল আমিন বলেন, ছোটবেলা থেকে চরম অভাব অটনের মধ্যে দিন কেটেছে। তবুও খেয়ে না খেয়ে নানা প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভাল ফলাফল করেছি। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে নানা প্রতিকুলতাকে পেছনে ফেলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছি। অবশেষে কুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু অর্থাভাবে যখন সেখানে ভর্তি হতে না পেরে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছিলো তখন জেলা প্রশাসক মহোদয় পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি কুয়েটে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় টাকাসহ সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

আল-আমিন অশ্রু সজল চোখে আরও বলেন, ‘আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছি।  

পরে আল আমিন সবার কাছে দোয়া ও একইসঙ্গে আগামী দিনের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা চান।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।