ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ময়মনসিংহে ফের লাগামহীন বেপরোয়া ইজিবাইক

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
ময়মনসিংহে ফের লাগামহীন বেপরোয়া ইজিবাইক শহরে চলছে বেপরোয়া ইজিবাইক/ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: দু’দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা দু’টি ইজিবাইকের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটলো নগরীর নতুন বাজার মোড় এলাকায়। ভেঙে গেলো সামনের গ্লাস। আঘাতপ্রাপ্ত হলেন যাত্রীরা। এরপর হৈচৈ-গণ্ডগোল।

এটা অতিসম্প্রতি ঘটা একটি সাধারণ ঘটনা। বেপরোয়া ইজিবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবরই বেশি।

মাত্রারিক্ত গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন এই যান সড়ক-মহাসড়কের আতঙ্ক। বড় যানগুলোকেও দুর্ঘটনায় পড়তে হয় এদের জন্য। বহুবার নিয়ম-নিষেধাজ্ঞার পরও থেমে নেই এ ত্রিচক্রযানের চলাচল।  

ময়মনসিংহ শহরের বাসিন্দাদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের এক নাম ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। অল্প ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধার ও অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় এই ‘বিষফোঁড়া’ যানের ‘রাশ’ টেনে ধরারও দাবি তুলেছেন তারা।  

শুধু কী তাই, ইজিবাইক চলাচলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন একটি নির্দিষ্ট নিয়ম করে দিলেও ‘সুযোগ সন্ধানী’ চালকরা নিয়মেরও তোয়াক্কা করছেন না।  

একদিন লাল রং ও অন্যদিন সবুজ রং- এমন নিয়মে ইজিবাইক চলাচলের কথা থাকলেও কে শোনে কার কথা! এ কারণেই প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলো হয়ে ওঠে দুর্গম!  

স্থানীয়রা জানান, স্বল্প আয়ের মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চলাচলের অন্যতম প্রধান যান ইজিবাইক। এই যানের মাধ্যমেই মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকায় নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। বিশেষ করে অফিস ডে’তে ‘হুড়োহুড়ি’ করে উঠতে গিয়েও ত্রাহি অবস্থা হয় তাদের।  

তবে তাদের অভিযোগ, ইজিবাইকের চালকরা আসনে বসে বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলেন। বেশিরভাগ সময়েই যাত্রী ধরার জন্য একটি ইজিবাইকের সঙ্গে অন্য একটি ইজিবাইকের রেষারেষির ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা হয়।  

ইজিবাইক চালকদের বেপরোয়া গতি ও অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোহেলুর রহমান নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী বাংলানিউজকে বলেন, নগরীতে কোনো রকম শৃঙ্খলা ছাড়াই ইজিবাইক চলাচল করে।  
বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটায়। ফলে দুরুদুরু বুকে ইজিবাইকে যাতায়াত করতে হয়।

জানা যায়, এক সময় ময়মনসিংহ পৌরসভায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সংখ্যা ছিল ৭৪৫টি। এর বাইরেও আরো কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ হাজার ইজিবাইক চলাচল করতো।  

অনিয়ন্ত্রিত এই ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে কয়েক দফা সভা করে পৌর কর্তৃপক্ষ গত বছরের জুনে অভিযান চালিয়ে চার হাজারের মতো ইজিবাইক জব্দ করে।  

এরপর একটি নিয়ম করে ইজিবাইক মালিকদের ৮ হাজার টাকায় ট্রেড লাইসেন্সের বিনিময়ে নতুন প্লেটসহ ইজিবাইকের গায়ে লাল ও সবুজ রং লাগিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।  

নিয়ম করা হয় একদিন নগরীতে লাল অন্যদিন সবুজ রং চিহ্নিত ইজিবাইক চলাচল করবে। এতে স্থানীয় নগরবাসীর যানজট ও ভোগান্তি দু’টোই কমার কথা ছিল।  

নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রথম দিকে কয়েক মাস এই নিয়ম ঠিকঠাক মানা হলেও এখন নিজেদের ইচ্ছামতো ইজিবাইক নিয়ে বের হচ্ছেন চালকরা। ফলে এক দিনেই অসংখ্য ইজিবাইক সড়কে নামায় প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে শহরবাসীকে।  

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ীই ইজিবাইকগুলো নগরীতে চলাচল করছে। তবে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে খোঁজ নিয়ে দেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮ 
এমএএএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।