ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সব মৌসুমেই ভাঙে কমলনগরের মেঘনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৮
সব মৌসুমেই ভাঙে কমলনগরের মেঘনা কমলনগরের মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধে ভাঙন (ফাইল ছবি)

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনা নদী সারা বছর ধরে ভাঙে। সব মৌসুমে অব্যাহতভাবে ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এই জনপদ। সম্প্রতি তীররক্ষা বাঁধে ফের ধস নামে। শুষ্ক মৌসুমেও বাঁধের ভাঙনে আতঙ্কিত উপজেলাবাসী।

গত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহতভাবে কমলনগরে ভাঙন চলছে। ভয়াবহ ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে ফসলি জমি, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

দ্রুত সময়ের মধ্যে তীররক্ষা বাঁধের সংস্কার এবং ভাঙন ঠেকাতে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হলে উপজেলা কমপ্লেক্সসহ কমলনগরের বিশাল অংশ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, গত দেড় বছরে তীররক্ষা বাঁধে অন্তত আট বার ধস নেমেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দুই পাশের এলাকা অব্যাহতভাবে ভাঙছে। অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিম্নমানের কাজ করায় বার-বার বাঁধে ধস নামছে।  

এই শীত মৌসুমেও উপজেলার পাটারিরহাট, সাহেবেরহাট, চরকালকিনি ও চর ফলকন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম অব্যাহতভাবে ভাঙছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে চর লরেন্স ও চর মার্টিন ইউনিয়ন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে ওইসব ইনিয়নের অন্তত ১৪টি পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটে হারিয়েছেন।

চর ফলকন ইউনিয়নের  লুধূয়া এলাকার ডা. ওবাইদুল হক চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা আশরাফুল হক শামিম বলেন,  তাদের বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে। ওই বাড়ির ১০টি পরিবারের দ্রুত সময়ের মধ্য বসতঘর সরিয়ে নিতে হবে।

সাহেবের হাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, সারাবছর ধরে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত থাকে। গত ৬ বছরের ভাঙনে তার ইউনিয়নের সাতটি ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

কমলনগর প্রেসক্লাবের সহ-সভপতি ছাইফ উল্লাহ হেলাল বলেন, দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে তীররক্ষা বাঁধ  রক্ষা করা যাবে না। বাঁধ রক্ষা না হলে কমলনগর বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  এই মুহূর্তে নদী তীররক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা জরুরি।  

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মূসা বাংলানিউজকে বলেন, পানি কমতে শুরু করায় নদীর ভাঙন বেড়েছে। এর প্রভাব তীররক্ষা বাঁধেও পড়েছে।  ভাঙন প্রতিরোধে এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। আরও সাড়ে ১৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে এটি অনুমোদন হবে বলে আশা করছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীররক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দ টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা।  

২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। এদিকে, ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবিতে ওই সময় মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে অনিয়মের মধ্য দিয়ে এক কিলোমিটার কাজ করা হলেও দেড় বছরে ৮ বার ধস নামে ওই বাঁধে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৮
এসআর/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।