পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প হিসেবে ‘তিস্তা ব্যারেজ’ নির্মাণ করা হয়।
১৯৯১ সালে মূল ব্যারেজের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ক্যানেলসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয় ১৯৯৮ সালের জুন মাসে।
এ সুযোগে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ৩০ থাকে ৩৫ টনের বেশি ওজনের ভারী যানবাহন চলাচলের সুবিধা দেয়। ফলে দিনদিন ব্যারেজ তার আয়ুষ্কাল হারাতে বসেছিল। এ জন্যই সরকার ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর ব্যারেজের উপর দিয়ে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে টোল আদায় বন্ধ করে ব্যারেজের উভয় গেটে মূল রাস্তার ৭ ফিট ৮ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে লোহার পাইপ বসিয়ে রাস্তা সংকীর্ণ করা হয়।
রাস্তা সংকীর্ণ করা লোহার পাইপ ভেঙে পুনরায় চলাচল সচল হয় ভারী যানবাহন। সরকারি এ নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে পুনরায় ভারী যানবাহন চলাচল শুরু করেছে ব্যারেজের উপর দিয়ে। ফলে পুনরায় ব্যারেজের আয়ুষ্কাল নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
হালকা যানবাহনের স্থানে চলাচল করছে পাথর বোঝাই ছোট থেকে মাঝারি ট্রাক। এ সুযোগে লালমনিরহাট হয়ে না গিয়ে তিস্তা ব্যারেজ অতিক্রম করে নীলফামারী হয়ে সারা দেশে যাচ্ছে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই ট্রাক। ফলে কমে আসছে লালমনিরহাট রংপুর মহাসড়কের তিস্তা সড়ক সেতুর টোল আদায়। একই কারণে কমে আসছে তিস্তা ব্যারেজের আয়ুষ্কালও। তিস্তা সড়ক সেতু হয়ে ঢাকা যেতে টোলসহ অনেক দূরের পথ অতিক্রম করতে হয়। তাই টোল ও জ্বালানি বাঁচাতে তিস্তা ব্যারেজের সামান্য কিছু উৎকোচ দিয়ে পার হচ্ছে এসব পাথর বোঝাই ট্রাক।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন ট্রাক চালক বাংলানিউজকে বলেন, ‘টাকা ছাড়া ব্যারেজে পাথর বোঝাই গাড়ি তোলা সম্ভব নয়। কিছু টাকা দিলেই বাঁধা নেই। ব্যারেজ হয়ে চলাচল করলে তিস্তা সড়ক সেতুর টোল ও অতিরিক্ত জ্বালানি দু'টোয় বেঁচে যায়। ’
তিস্তা ব্যারেজ দেখতে আসা সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যারেজে এতো ভারী যানবাহন চলার কারণে ব্যারেজের স্থায়িত্ব যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, তেমনি ব্যারেজের সংযোগ সড়ক ফ্লাড বাইপাস সড়কও বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। টোল ছাড়া এমন ভারী যানচল বন্ধে সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
তিস্তা ব্যারেজের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা আনসার ক্যাম্পের ইনচার্জ (ভার) আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, উৎকোচ দিয়ে নয়, লোহার পাইপের মাঝ দিয়ে যাওয়ার মত ছোট ছোট ট্রাক চলাচল করে। তবে লোহার পাইপ কারা কিভাবে ভেঙেছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।
তিস্তা ব্যারেজে নিরাপত্তায় থাকা ব্যারেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আফওয়াজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যারেজে উৎকোচ নেওয়া কারো কোনো সুযোগ নেই। পাউবো’র অনুমোদন অনুযায়ী ছোট ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করে। তবে পাথরের ট্রাক চলাচলের কোনো সুযোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নজরে এসেছে। এ নিয়ে নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ব্যারেজের স্থায়িত্ব রক্ষায় খুব দ্রুত এসব যানবাহন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৯
জিপি