রোববার (১৩ জানুয়ারি) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চূড়ান্ত মজুরি ঘোষণা করেন। এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব আফরোজা খানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পোশাক শ্রমিকরা জানুয়ারি মাসের বেতন নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে পাবেন। নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে ডিসেম্বর মাসে যে পরিমাণ টাকা কম পেয়েছেন, তাও জানুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আগমী দু’একদিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এছাড়া যারা ভাঙচুর করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত। এই কয়দিনে যে ক্ষতি হয়েছে শ্রমিকরা সবাই উদ্যোগী হয়ে কাজ করে পুষিয়ে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আন্দোলনে নিহত শ্রমিকের পরিবারের জন্য সরকারের নিয়ম অনুসারে ক্ষতিপূরণ পাবেন। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে নিহতের পরিবারকে এক লাখ টাকা দেবো বলেও ঘোষণা দেন নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিনে আন্দোলনের নামে যারা পোশাক কারখানা ভাঙচুর করেছে, তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সম্পদ রক্ষায় সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। সরকার যেন কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়। এসময় পোশাক শ্রমিকদের অনতিবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সচিব আফরোজা খান বলেন, শ্রমিকবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে ১ এবং ২ নং গ্রেডের মজুরি সমন্বয়েরও নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে সমন্বয়ের পর প্রতিটি গ্রেডেই মজুরি যৌক্তিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সঙ্গে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ বাড়ি ভাড়া ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ করে সবপক্ষের সহযোগিতায় কমিটি একটি সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। দেশে গার্মেন্টস শিল্পের উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে শ্রমিকরা আজই কাজে যোগ দেবেন বলে আশা করছে সরকার।
বৈঠকে জানানো হয়, ২০১৩ সালে ৭ম গ্রেডে বেতন ছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৮ হাজার টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৮ হাজার টাকাই রাখা হয়েছে।
২০১৩ সালে ৬ষ্ঠ গ্রেডে বেতন ছিল ৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৮ হাজার ৪০৫ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৮ হাজার ৪২০ টাকা করা হয়েছে।
২০১৩ সালে ৫ম গ্রেডে বেতন ছিল ৬ হাজার ৪২ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা করা হয়েছে।
২০১৩ সালে ৪র্থ গ্রেডে বেতন ছিল ৬ হাজার ৪২০ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৯ হাজার ২৪৫ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা করা হয়েছে।
২০১৩ সালে তৃতীয় গ্রেডে বেতন ছিল ৬ হাজার ৪০৫ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৯ হাজার ৫৯০ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে।
২০১৩ সালে ২য় গ্রেডে বেতন ছিল ১০ হাজার ৯০০ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা করা হয়েছে।
আর ২০১৩ সালে ১ম গ্রেডে বেতন ছিল ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ১৭ হাজার ৫১০ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা করা হয়েছে।
শ্রমিকদের পক্ষে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, সোমবার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। মজুরি কাঠামো নিয়ে যে অসামঞ্জস্যতা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা সমাধান হয়েছে। আজকে যে মজুরি ঘোষণা হলো আমরা স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে আমরা আন্দোলন করবো। তবে আন্দোলন মানে রাস্তা অবরোধ নয়, কারখানা ভাঙচুর নয়। এছাড়া এই কয়দিনে আন্দোলনের নামে যারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে নিরপরাধ কেউ যেন হযরানি না হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিজুল ইসলাম, এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম, বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, আতিকুল ইসলাম, সালাম মুর্শিদী। এছাড়া জাতীয় শ্রমিকলীগের কার্যকরী কমিটির সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, ইন্ডাস্ট্রি অল এর মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন, শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ আহমেদ, কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শামসুল জামান ভূইয়া, শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক আবদুস সালামসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৯/আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা
জিসিজি/জেডএস