প্রায় ৩০টির মতো কুকুর নিয়ে চলাফেরা করে এই মনিব। এরমধ্যে অর্ধেকের মতোই কুকুর ছানা।
মনিব সারাদিন বাইরে ঘুরে বেরিয়ে চেয়ে চিন্তে টাকা সংগ্রহ করেন। সেই টাকায় খাবার কিনে তবেই ঘরে ফেরেন। এরপর নিজে খায় এবং কুকুরগুলোকেও খাওয়ায়। কুকুরগুলো তার মনিবের প্রতি চরম বিশ্বাসী। মনিবেরও চরম আস্থা এসব কুকুরের প্রতি। সব সময় মনিবকে পাহারা দিয়ে রাখে ওরা। মনিব ঘরে থাকলে ওরাও ঘরে থাকে। মনিব বাইরে বেরুলে ওরাও মনিবের পিছু চলে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বাস্তবে কুকুর ও মনিবের চলাফেলা দেখলে মনে হয় এটা যেন পিয়াসের ‘ডগ স্কোয়াড’। তবে খাবার সংগ্রহের প্রয়োজনে অনেক সময় মনিব ওদের ঘরে আটকে রেখে বাইরে বের হয়।
চোখে না দেখলে দৃশ্যটা বিশ্বাস করা অনেকটা কঠিন। তবে ঘটনাটি সত্য। ঘটনাটিকে অনেকটা বিরল হিসেবে অভিহিত করেন অনেকেই। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এলাকায় গেলে এমন দৃশ্য ধরা দেবে যে কারো চোখে। কুকুরপ্রেমী এই মনিবের নাম পিয়াস। নিজেকে ‘পিয়াস ভান্ডারী কুত্তা পাগল’ বলে পরিচয় দেয়। বয়স বড়জোর ২০ থেকে ২২ বছরের মতো হবে। কথা বলতে পারে। তবে খুব একটা না। কেউ কোনো কিছু জানতে চাইলে চুপচাপ থাকে। মানুষের দিকে শুধুই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। পিয়াস নাকি দেশের বিভিন্ন মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ায়।
শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. রায়হান বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে তার অফিস এলাকায় পিয়াসের আবির্ভাব ঘটে। এলাকার অনেকগুলো কুকুরছানা দেখা যায় ওর সঙ্গে। কুকুরগুলোর চলাফেরায় মনে হলো যেন পিয়াস ওদের প্রভু।
তিনি বিষয়টি চিন্তা করে পিয়াস ও কুকুরগুলোর থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
তিনি আরও জানান, তার দফতরের একটি পরিত্যক্ত ঘর ওদের জন্য বরাদ্দ করে দিলেন। শীতের কথা চিন্তা করে পিয়াস ও কুকুরগুলোর জন্য কম্বলসহ বেশ কিছু গরম কাপড়-চোপড়ের ব্যবস্থা করে দিলেন। এছাড়া প্রতিদিন কুকুরের জন্য কিছু খাবার ও পিয়াসের জন্য ১শ’ টাকা নিজ থেকে দেন তিনি।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, পিয়াসের সঙ্গে অনেকগুলো কুকুর ছানা রয়েছে। শীতের কারণে ওদের সমস্যা হতে পারে। এ কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র তার দফতর থেকে সরবরাহ করা হয়। তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যেন মানুষকে কামড়ালে কোনো ক্ষতি না হয়। এছাড়া পিয়াসও নাকি কুকুরের দুধ পান করে। তবে তিনি তা দেখেননি। সবমিলে মানবিক দিক বিবেচনা করে তিনি এই কাজটি করেছেন। মাঝে মধ্যে পিয়াস তার দফতরেও আসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাথায় কালো কাপড় প্যাঁচানো। গায়ে শীতের মোটা কাপড় জড়ানো। পরনে পোশাকটাও মোটা। বাবু মেরে বসে আছে। আর কুকুর ও কুকুর ছানা তাকে ঘিরে রেখেছে। কুকুর ছানার মুখে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু দিচ্ছেন পিয়াস। মাঝে মধ্যে কুকুরগুলোর সঙ্গে একা একাই হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠেন পিয়াস। এসময় আরো অনেকগুলো কুকুর ও কুকুর ছানা তার আশ-পাশে দিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলো।
বয়োবৃদ্ধ আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি জীবনে এমন দৃশ্য দেখিনি। তবে বাসাবাড়িতে কাউকে কাউকে শখ করে দু’একটি কুকুর লালন পালন করতে দেখেছি। এখনও অনেকেই করেন। কিন্তু এতোগুলো কুকুর ও কুকুর ছানা মনিবকে এতো ভক্তি করে তা কখনো দেখিনি। একই কথা জানালেন নবীন আনছার আলী।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি