পাশাপাশি আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মিয়ানমার অংশের নো ম্যানস ল্যান্ডে গড়ে তোলা রোহিঙ্গা বসতি এবং বাংলাদেশের পুরো তুমব্রু এলাকায় বন্যার আশঙ্কা করছে তারা।
তবে গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘ঘুমধুমের তুমব্রুখালের উপর ব্রিজ নির্মাণ করছে মিয়ানমার’ এ ধরনের খবর শিরোনাম হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, এক সারিতে বড় বড় নয়টি পিলার বসানো হয়েছে। আরও পিলার বসানোর কাজ চলছে। তবে খালের উপর এ ধরনের পাকা স্থাপনা নির্মাণের কারণে কোনারপাড়ার রোহিঙ্গা শিবিরসহ তুমব্রু এলাকাটি পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তুমব্রু এলাকার মিয়ানমার অংশে পাহাড়ের উপর মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তুমব্রু রাইট বিজিপি ক্যাম্পটি অবস্থিত। মূলত ওই ক্যাম্পটির ঠিক নিচে খালের উপর পাকা পিলার বসিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। ৮-১০ ফুট পর পর পাকা পিলার স্থাপন করা হচ্ছে।
ঘুমধুম কোনারপাড়া নো মেনস-ল্যান্ডের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য এটি মিয়ানমারের নতুন ফাঁদ। ওই খালের উপর ব্রিজ বা কাঁটাতারের বেড়া যাই দেওয়া হোক না কেন এটির কারণে বর্ষাকালে খালের পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে পুরো এলাকাটি বন্যায় প্লাবিত হবে। রোহিঙ্গারা তখন ওই স্থানে আর থাকতে পারবে না।
পরবর্তীতে মিয়ানমার পরিকল্পিতভাবে ওই জায়গায় বাঁধ দেবে এমন আশঙ্কা করে তিনি বলেন, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। রোহিঙ্গা শিবিরসহ পুরো তুমব্রু এলাকাটি পানিতে ডুবে যাবে। যে কারণে এখন আবার রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
কোনারপাড়ায় বসবাসরত রোহিঙ্গা আবুল হাশেম বলেন, আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমার আমাদের এখান থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। রাতে ঢিল ছোঁড়া, গুলিবর্ষণ থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। না পেরে মিয়ানমার নতুন এ কৌশল নিয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, ওই খালের উপর আগে ছোট ছোট কাঠের খুঁটি দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। এখন বসানো হচ্ছে বড় বড় পাকা পিলার। ছোট একটি খালের মাঝখানে এ ধরনের স্থাপনা কেন করা হচ্ছে বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। এই স্থাপনার কারণে বর্ষায় কোনারপাড়ার নো মেনস-ল্যান্ডের রোহিঙ্গা শিবির এবং ঘুমধুমের তুমব্রু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হবে।
কক্সবাজার-৩৪ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বাংলানিউজকে বলেন, ওখানে কোনো ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে না এবং কংক্রীটের অবকাঠামোও নির্মাণ করা হচ্ছে না। খালের উপর আগে কাঠের খুঁটি দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। এখন পাকা পিলার বসিয়ে বেড়ার সংস্কার চলছে। তবে ব্রিজ বা বাঁধ নির্মাণের মতো কোনো কাজ মিয়ানমার শুরু করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ ঘটনার জোর প্রতিবাদ জানানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯
এসবি/আরআর