নামে বেনামে বরাদ্দ দিয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন এতিমদের বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা। যাদের বরাদ্দ দিচ্ছে সমাজসেবা অধিদফতর তারাও বলছেন দফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই বরাদ্দ নিচ্ছেন তারা।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলায় ১৩১টি এতিমখানায় ২ হাজার ৩৬৩ জন এতিম শিশুর জন্য বছরে দুই কিস্তিতে সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
বরগুনার বিভিন্ন এতিমখানায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তালিকায় থাকা ১৩১টি এতিমখানার বেশির ভাগই বছরের প্রায় সময়ই বন্ধ থাকে।
বন্ধ থাকা উত্তর আংগারপাড়া দাখিল মাদ্রাসা ও শিশু সদন (এতিমখানা), কেওড়াবুনিয়া এতিমখানা মহিলা সি: (আলিম) মাদ্রাসা তালাবদ্ধ থাকে কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে এতিমখানা পরিচালকরা জানান এতিমরা ছুটিতে রয়েছে।
অন্যদিকে সাহেবের হাওলা চাদবরু বালিকা শিশু সদনে বাবা-মা জীবিত এমন তিনটি মেয়েকে পাওয়া গেলেও ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট রয়েছে ১৮ জন। তেমনি আয়লাপাতাকাটা খানকায়ে ছালেহিয়া মাদ্রাসায় তিনটি ছেলে থাকলেও তাদের মা-বাবা বেঁচে আছে জানায় শিশুরা, এখানে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট রয়েছে ১৯ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসা পরিচালকদের কাছ থেকেই জানা গেছে, এতিমদের বরাদ্দের টাকা আত্মসাতে সমাজসেবা অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছে।
প্রতিবার বরাদ্দ দেয়ার আগে সমাজসেবা কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দিলেই পরিদর্শন ছাড়াই বরাদ্দ দেয়া হয় এতিম শূন্য এ সব এতিমখানাগুলোতে।
নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে এতিমখানার বরাদ্দ পেতে হলে সর্বনিম্ন ১০ জন এতিম থাকতে হবে। কিন্তু অবৈধভাবে টাকা আয় করতে বছরের পর বছর এতিমশূন্য এসব এতিমখানাগুলোতে বরাদ্দ দিয়ে আসছে বরগুনা জেলা সমাজসেবা অধিদফতর।
এ ব্যাপারে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরগুনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের, সচেতন নাগরিক মো. মোশাররফ হোসেন, হাসানুর রহমান ঝন্টু, জাফর হোসেন হাওলাদার, ইফতেখার শাহীন বাংলানিউজকে জানান, সমাজসেবা অধিদফতর ও কিছু ঘৃণিত প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে এতিমদের বরাদ্দের টাকা প্রতিবছর হাতিয়ে নিচ্ছে একটি কু-চক্রী মহল। তাই এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ বন্ধ করতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
বরগুনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অ.দা.) খন্দকার গোলাম সরওয়ার বাংলানিউজকে জানান, বরগুনা জেলায় আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। আমার সময় যদি বরাদ্দের টাকা দেয়া হয় তাহলে প্রত্যেক এতিমখানা পরিদর্শন করে বরাদ্দ দেয়া হবে। আর যে এতিমখানায় এতিম শিশু না থাকবে সেই প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট হারানোসহ বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হবে। এ কথার কোনো নড়চড় হবে না বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
আরএ